Monday , February 17 2025

৭ নভেম্বর বিপ্লব: আমার সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশ

অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস মোল্লা:

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের বিপ্লবের সাথে জড়িয়ে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের দুই কৃতি সন্তানের নাম। একজন আবু তাহের অন্যজন জিয়াউর রহমান। দুজনই আপন আপন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই। তাঁদের পাশে রয়েছে আরেক মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফেরও নাম। এই তিনজন মুক্তিযোদ্ধার কৃতিত্ব ও ব্যর্থতার পটভূমিকায় সৃষ্টি হয়েছে ৩ নভেম্বর অধ্যায়।

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতীয় দূতাবাস অযাচিত হস্তক্ষেপে আমাদের সেনাবাহিনীতে বিশৃংখলা ‣তরীর প্রেক্ষিতে খারেদ মোশাররফ ৩ নভেম্বরের অভ্যূত্থান চালায়। অভূত্থানের চুড়ান্ত রূপ পাওয়ার প্রারম্ভেই দেশ প্রেমিক সিপাহরা ভারত বিরোধী শ্লোগানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ৩ নভেম্বরের অভূত্থানকারী খালেদ মোশাররফ কে প্রথম আঘাতেই ঘায়েল করে ফেলে। বিপ্লবীরা ভারত বিরোধী চেতনাকে চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে জাতীয়বাদী চেতনা রূপে জয়যুক্ত করেছিল। ৩ নভেম্বরের অভূত্থান সম্পুর্নরূপে ব্যর্থ হয়, সংঘটিত হয় ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব।

এ বিপ্লবের সূচনায় ছিলেন না জিয়াউর রহমান। ছিলেন না সমাপ্তি পর্বেও। এই বিপ্লবের উত্তাল তরঙ্গে তিনি রাষ্ট্র ক্ষমতার উচ্চ বেদীতে চলে এলেন। তাকে বিপ্লবীরা বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসে। সকলের নিকট গ্রহনযোগ্য মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে রাজধানীতে সাজোয়া ট্যাংকে করে সিপাহি-জনতার মিছিল। সে এক অপূর্ব দৃশ্য।

রাজধানীর স্বর্বস্তরের মানুষ এই বিপ্লবকে অভিনন্দন জানিয়ে ফুল দিয়ে বরন করে। দেশ উল্লাসে মেতে উঠে। দুরিভূত হয় রাজ‣নতিক অমানিশার অন্ধকার। অবসান ঘটে বিভিষিকাময় পরিস্থিতির বাংলাদেশের স্বার্বভে․মত্ব নিয়ে ছিনিমিনি খেলার আপাতত ঘটে অবসান। ৭ নভেম্বরের বিপ্লব এর চুড়ান্ত বিজয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির পথে এক সুস্পষ্ট মাইল ফলক।

৭ নভেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে সূচীত হয় বহুমুখীধারা। গনতন্ত্রের যে আর্শাবাদ মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের জয়যাত্রা শুরু করেছিল। এবং মাঝপথে যার গতি রুদ্ধ করেছিলল। সেই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুর্নবাসনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। বহু বিভক্তিতে ভরা অ‣নক্যের স্থলে জাতীয় জীবনে নতুন ভাবে জাতির ঐক্যের সৃষ্টি সুচনা হয় ওই সময় থেকে।

অর্থনেতিক ক্ষেত্রে আধুনিক অর্থনীতির ক্সবশিষ্ট্যগুলো একে একে বিকশিত হতে থাকে। রুশভারতের কক্ষ পথের অন্ধকার থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মুক্তি লাভ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিশ্বময় বিস্তৃতি লাভের সুযোগ পায়।

অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে বিপ্লবের আর্দশে উদ্ভোদ্ধ হয়ে নানা মুখী দুরদর্শি তৎপরতায় মানুষ জাগরিত হয়। বিপ্লব স্বপ্ন দেখায় আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মানে। নানা শ্রেনী পেশার মানুষ বিপ্লবের ফলে কারখানা, ক্ষেতে খামারে উৎপাদন বৃদ্ধিতে তৎপর হয়ে উঠে। বাংলাদেশের গ্রামে গঞ্জে, হাটে-বাজারে, শহর-বন্দরে এক অভূর্তপুর্ব জাগরনের সৃষ্টি হয়।

দেশের প্রত্যেকটি উন্নয়ন সূচক ইতিবাচক হতে থাকে। এবারের ৭ নভেম্বরের বিপ্লব দিবসটি রাজ‣নতিক অনুকুল অবস্থায় উদযাপিত হচ্ছে। ১৯৭৫ সালে নভেম্বরের বিপ্লরোত্তর পরিস্থিতির সাথে জুলাই-আগষ্ট বিপ্লরোত্তর পরিস্থিতির সাদৃশ্যপূর্ন বাংলাদেশ এখন ভারতীয় আগ্রাসনমুক্ত সার্বভে․ম সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্র জনতার অভ্যূত্থান ৭ নভেম্বরের চেতনায় উৎসারিত। সশস্র সরকারী দমনে নিরস্ত্র ছাত্র- জনতার বিপ্লবে আধুনিক বিশ্বে বিরল উদাহরন। এই বিপ্লব কে বেহাত হতে দেয়া যাবে না। বিপ্লবকে টেকসই করতে রাষ্ট্র মেরামত আবশ্যক। ৫ই আগষ্টকে অভ্যুত্থান দিবস ঘোষনা করে আগষ্ট মাসকে বিজয়ের মাস হিসেবে পক্ষকাল ব্যাপী করতে হবে উদযাপন। হালখাতার ন্যায় বছরান্তে দিবসের শিক্ষায় পরমপরায় ক্সতরী হবে বিপ্লবের প্রহরী।

এবারের ভিন্ন মাত্রায় উদযাপিত জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে দেশ প্রেমিক, সৎসাহসি সিপাহি-জনতাকে জানাই-লাল সালাম। জানাই সালাম সেই অকুতোভয় সেনানায়ককে যার বীরত্ব গাঁথা খেমকারান রনাঙ্গনে, কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে, ৭ নভেম্বরের-বিপ্লবের তরঙ্গে দেশের মূলবেদীতে আরোহনকে।

প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ। জীবন বাংলাদেশ, আমার মরন বাংলাদেশ, এই চরনগুলো যাঁর মুখে উচ্চরিত সেই মানুষটি আছে মানুষের হৃদয়ে অম্লান, অমলিন। তিনি সিক্ত হয়েছিল শেষ বিদায়ে লক্ষ কোটি মানুষের অশ্রুসজল নয়নে। তাইতো জিয়া অমর, বাংলাদেশের মানুষের মানকোটায়।
লেখক ঃ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউনুস মোল্লা
আহবায়ক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও
মহা-সম্পাদক, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি।

About somoyer kagoj

Check Also

নিত্য পণ্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা প্রয়োজন

ড. কামরুজ্জামান:শিক্ষক, কলামিস্ট ও গবেষকবর্তমানে বাজারে সকল ধরনের নিত্য পণ্যের দাম যে কোনো সময়ের চেয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *