কামরুন নাহার:
সাধারণত সিন্ডিকেট বলতে একদল ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্বভোগীদের এমন একটি গোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা বাজারের সরবরাহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। এই সিন্ডিকেটগুলো সাধারণত মূল কৃষকদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে একটি কারসাজির মাধ্যমে বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।এর ফলে বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে,এবং ভোক্তাদের বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে।
আমরা জানি, সিন্ডিকেট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে যেমন-বাজার সিন্ডিকেট,সাপ্লাই চেইন সিন্ডিকেট,মূল্য নির্ধারণ সিন্ডিকেট,মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট,সরকারি টেন্ডার সিন্ডিকেট,বাণিজ্য সিন্ডিকেট,চোরাচালান সিন্ডিকেট,মাফিয়া সিন্ডিকেট,চুক্তিভিত্তিক সিন্ডিকেট,শ্রম বাজার সিন্ডিকেট,মোট কথা হলো সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পণ্য, সেবা, বাজার, এবং অন্যান্য খাতে ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
সাধারণত বাজার নিয়ন্ত্রণ, মূল্য বৃদ্ধি, সরবরাহ সীমিতকরণ বা প্রতিযোগিতা দমন করার মাধ্যমে নিজেদের মুনাফা বৃদ্ধি করে। সিন্ডিকেটের ধরন পণ্য বা সেবার প্রকারভেদ অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং সমাজ ও অর্থনীতির ওপর বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।সিন্ডিকেটের কিছু প্রধান ধরন হলো-
সিন্ডিকেট কার্যকলাপের কারণে:
*ন্যায্য মূল্যে সবজি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
*কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পান না।
*বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়, যা পণ্যের মূল্য আরও বাড়িয়ে দেয়।
এই ধরনের সিন্ডিকেট কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন, তবে সরকারের মনিটরিং এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব।
বাজারের সিন্ডিকেটের সাথে সাধারণত নিম্নলিখিত গোষ্ঠীগুলো জড়িত থাকতে পারে:
- মধ্যস্বত্বভোগী ও পাইকাররা: এরা কৃষকদের
কাছ থেকে পণ্য কিনে বড় বাজার বা আড়তে নিয়ে আসে। এই মধ্যস্বত্বভোগীরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বা একসাথে মিলে দাম বাড়িয়ে দেন, যাতে সাধারণ ভোক্তারা বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হন। - আড়তদার ও ব্যবসায়ী: আড়তদাররা পাইকারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে এবং পরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। অনেক সময় এই আড়তদাররা মিলে সিন্ডিকেট তৈরি করেন এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
- বড় খুচরা বিক্রেতা: ধারনা করা যায়,কিছু বড় খুচরা বিক্রেতাও সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। তারা পণ্য বেশি দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করেন।
- সরবরাহকারী এবং পরিবহনকারীরা: কিছু ক্ষেত্রে পরিবহন খাতের লোকেরাও সিন্ডিকেটের অংশ হতে পারে। তারা পরিবহন ব্যবস্থা ধীর করে বা মাল সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে।যার কারণে
বর্তমানে এই গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে বাজারে একটি অবৈধ মূল্য বৃদ্ধি ব্যবস্থা চালু হয়েছে ,যা মূলত ভোক্তা ও কৃষকদের উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
দেখা যাচ্ছে সব্জি বাজারেও সিন্ডিকেটের গোষ্ঠী সাধারণত কিছু বিশেষ পরিস্থিতি ও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে গড়ে ওঠছে। এই প্রক্রিয়ায় কিছু মূল বিষয় ভূমিকাগুলো হলো-
১. বাজারের নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধতা:বাজারে সরকারি তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট না থাকলে বা দুর্বল হলে, ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করতে পারে। যখন তদারকি বা মনিটরিং কম থাকে, তখন ব্যবসায়ীরা একে অপরের সাথে যোগসাজশ করে কৃত্রিমভাবে পণ্যের দাম বাড়ায়।
২. মধ্যস্বত্বভোগীদের শক্তিশালী অবস্থান:অনেক সময় কৃষকরা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে সবজি বিক্রি করতে পারেন না। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা তাদের কাছ থেকে সবজি কিনে নেয় এবং বাজারে সেই সবজি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ব্যবসায়ীরা বাজারে একচেটিয়া প্রভাব তৈরি করে সিন্ডিকেটের অংশ হতে পারে।
৩. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মুনাফার লোভ:
ব্যবসায়ীদের মধ্যে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা সিন্ডিকেট গঠনের একটি বড় কারণ। কিছু ব্যবসায়ী দ্রুত লাভের আশায় বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন এবং দাম বাড়িয়ে দেন।
৪. পণ্যের সরবরাহের সংকট ও মৌসুমি ভিন্নতা:
মৌসুমভিত্তিক সবজি চাহিদা ও সরবরাহের পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা এই ধরনের সংকটের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। তারা সংকটকালীন সময়ে মজুদ করে রাখা পণ্য বাজারে আনতে দেরি করে, ফলে দাম বাড়তে থাকে।
৫. যোগাযোগ ও যোগসাজশ:সিন্ডিকেট গড়ে ওঠার জন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং সমন্বয় প্রয়োজন। তারা নিজেদের মধ্যে দাম ঠিক করে এবং অন্য ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এই যোগসাজশ সাধারণত গোপনে হয়, যার ফলে বাইরে থেকে বোঝা কঠিন হয়।
৬. আইনের দুর্বল প্রয়োগ:বাজারে সিন্ডিকেটের প্রসার ঘটার আরেকটি বড় কারণ হল আইনের দুর্বল প্রয়োগ। অনেক ক্ষেত্রে আইন থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি এবং কঠোর শাস্তির অভাবের কারণে সিন্ডিকেট কার্যকর থাকে।
৭।. স্থানীয় প্রভাবশালীদের ভূমিকা:কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এই ধরনের সিন্ডিকেট গঠনে সহায়তা করে। তাদের প্রভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে কার্যক্রম চালাতে পারে।এভাবে ধাপে ধাপে সিন্ডিকেট গড়ে ওঠছে এবং বাজারে প্রভাব বিস্তার করেই চলছে –
বাজারে সিন্ডিকেট দমন করতে বিভিন্ন কৌশল এবং নীতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এই ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হলে সরকারের পাশাপাশি ভোক্তাদের, কৃষকদের এবং অন্যান্য সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।যেমন কিছু কার্যকরী পদ্ধতি হতে পারে :
১. সরকারি তদারকি ও নজরদারি বাড়ানো:
বাজারে সিন্ডিকেট কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং তদারকি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাজারে বিশেষ দল গঠন করা যেতে পারে, যারা নিয়মিত বাজার মূল্য, সরবরাহ এবং মজুদ পরিদর্শন করবে। এভাবে সিন্ডিকেট কার্যকলাপ দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব।
২. কঠোর আইন প্রয়োগ:সিন্ডিকেট দমনে কঠোর আইন ও শাস্তির ব্যবস্থা থাকতে হবে। কৃত্রিম সংকট তৈরি বা বাজারে দাম বাড়ানোর জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়াও, সিন্ডিকেট কার্যকলাপের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল, জরিমানা এবং শাস্তির বিধান কার্যকর করা প্রয়োজন।
৩. কৃষকদের সরাসরি বাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করা:মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে এবং সিন্ডিকেটকে দুর্বল করতে কৃষকদের সরাসরি বাজারে তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ দিতে হবে। এজন্য কৃষকদের জন্য কৃষক বাজার (Farmers’ Market) তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তারা সরাসরি ভোক্তাদের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ কমে যাবে এবং কৃষকরা সঠিক মূল্য পাবেন।
৪. অনলাইন ও ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস চালু করা:
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সরাসরি কৃষক এবং ভোক্তার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে সিন্ডিকেট কার্যকলাপ এড়ানো যেতে পারে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কৃষকরা সহজে পণ্য বিক্রি করতে পারলে, সিন্ডিকেটের সুযোগ কমে যাবে এবং বাজার স্বচ্ছ হবে। এছাড়া, ভোক্তারা অনলাইনে পণ্য কিনতে পারবে সঠিক মূল্য অনুযায়ী তবে এইক্ষেত্রেও স্বচ্ছতা প্রয়োজন।
৫. বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা:বাজারে প্রতিদিনের পণ্যের মূল্য, সরবরাহ এবং চাহিদার তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা দরকার। এভাবে সবাই জানতে পারবে কোন পণ্যের দাম কেমন এবং কোথায় কী পরিস্থিতি চলছে। বাজারে মূল্য তালিকা প্রতিদিন প্রকাশ করা এবং কঠোরভাবে অনুসরণ করাও সিন্ডিকেট দমনে সহায়ক হত পারে।
৬. মজুদ নিয়ন্ত্রণ এবং কৃত্রিম সংকট রোধ:
ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্য মজুদ করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। মজুদকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি আরোপ করে এবং পণ্যের মজুদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে তাদের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
৭. ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা সংস্থা সক্রিয় করা:
ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোকে সক্রিয় করতে হবে, যাতে তারা সিন্ডিকেট কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারে। এই সংস্থাগুলো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ এবং তদারকির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৮. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:সিন্ডিকেট কার্যকলাপ সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন করতে হবে। কিভাবে সিন্ডিকেট কাজ করে এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে জানানো দরকার,তবেই সচেতন ভোক্তারা সিন্ডিকেট কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
৯. অবৈধ যোগসাজশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা:
ব্যবসায়ীরা যদি গোপনে যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া চালাতে হবে। প্রতিযোগিতা আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে, যাতে বাজারে অবৈধ যোগসাজশ কমে যায়।
১০. ভোক্তা অধিকার সংস্থার সক্রিয় ভূমিকা: ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলোর সক্রিয়তা বাড়াতে হবে, যাতে তারা সিন্ডিকেট কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। ভোক্তাদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্ত করা এবং সিন্ডিকেট কার্যকলাপ শনাক্ত করা এই সংস্থাগুলোর একটি প্রধান দায়িত্ব হতে পারে।
১১. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:সিন্ডিকেটের কৌশল এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাও জরুরি। গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে সিন্ডিকেট সম্পর্কে সচেতন করা যেতে পারে, যাতে তারা কৃত্রিম সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকে এবং প্রতিবাদ করতে পারে।
১২. সরকারি নীতিমালা ও বাজারে সমন্বয়:
বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকারি নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ রোধে কাজ করতে হবে।
এই পদ্ধতিগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হলে, বাজারে সিন্ডিকেটের কার্যকলাপ অনেকটাই দমন করা সম্ভব হবে এবং পদক্ষেপগুলো কার্যকর হলে বাজারে স্বাভাবিক মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, ফলে ভোক্তা ও কৃষক উভয়েই লাভবান হবেন।
সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণ, ভোক্তা, এবং কৃষকরা সক্রিয়ভাবে কাজ করলে বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে সাহায্য করা সম্ভব।সবাই সন্মেলিতভাবে কিছু পদক্ষেপ নিলে সিন্ডিকেটের প্রভাব কমাতে সহায়ক হবে। এখানে কিছু কৌশল উল্লেখ করছি :
*বিকল্প উৎস থেকে পণ্য কেনা:ভোক্তারা যদি স্থানীয় কৃষক বা সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে কেনার চেষ্টা করেন, তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট দুর্বল হবে। তাছাড়া কৃষক বাজার কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি পণ্য কেনাকাটা করাও সম্ভব।
*ভোক্তা অধিকার রক্ষা ও অভিযোগ দাখিল:
বাজারে কোনো সিন্ডিকেট বা মূল্য বৃদ্ধির কারসাজি চোখে পড়লে, ভোক্তারা ভোক্তা অধিকার সংস্থায় অভিযোগ দাখিল করতে পারেন। সক্রিয়ভাবে অভিযোগ করা এবং প্রতিক্রিয়া জানালে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
*ক্রেতাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা:
ভোক্তা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরিচিতদের মধ্যে সিন্ডিকেটের কারসাজি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সঠিক মূল্য জানতে আগ্রহী হতে হবে। যত বেশি মানুষ সিন্ডিকেট সম্পর্কে সচেতন হবে, তত কম সুযোগ পাবে সিন্ডিকেটগুলো তাদের কার্যকলাপ চালানোর।
- কৃষকদের সমর্থন ও সহায়তা করা:
আমরা সরাসরি কৃষকদের সমর্থন করতে পারি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য কেনা এবং কৃষকদের ন্যায্য দাম দেওয়া হলে তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বাজারে সঠিকভাবে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে। এছাড়া, কৃষক সমিতি বা কোঅপারেটিভ গঠন করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা যায়, যা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করবে।
*বিকল্প খাদ্য পরিকল্পনা:সিন্ডিকেট যদি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, তখন সেই পণ্য কেনার পরিবর্তে অন্যান্য বিকল্প খাবার বেছে নেওয়া যেতে পারে। এতে সিন্ডিকেটদের কারসাজি ব্যর্থ হবে, কারণ তারা বাজারে প্রভাব রাখতে পারবে না যদি তাদের পণ্যের চাহিদা কমে যায়।
- সামাজিক মাধ্যমে সচেতনতা প্রচার: সিন্ডিকেটের অপকৌশল সম্পর্কে সচেতনতা ছড়ানোর জন্য সামাজিক মাধ্যম একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আপনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বা প্রচারণা চালিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে পারেন। যদি এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তবে মানুষকে সচেতন করবে।
*স্থানীয় সমিতি ও এনজিও’র সাথে কাজ করা:
স্থানীয় সমিতি বা এনজিও’র সাথে মিলিত হয়ে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান কৃষকদের সহযোগিতা করতে পারে এবং বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
*বাজার পর্যবেক্ষণ ও মূল্য তালিকা যাচাই:ক্রেতা হিসেবে বাজারের প্রতিদিনের মূল্য তালিকা নজর রাখতে হবে। কোনো অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি বা বাজারে কৃত্রিম সংকটের প্রমাণ পেলে, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা গণমাধ্যমে জানিয়ে দিতে হবে। কারণ জনগণের চাপের মুখে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে।
*গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো:যদি কোথাও সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব পাওয়া যায় বা তাদের কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে গণমাধ্যমে সে বিষয়টি প্রচার করা যেতে পারে। মিডিয়ার নজরদারি সিন্ডিকেট কার্যকলাপ বন্ধ করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
*গ্রামভিত্তিক সমবায় গঠন:গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে সমবায় গঠন করে যৌথভাবে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করতে পারে। এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে এবং কৃষকরা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারবেন।
সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জনগণ, সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। অর্থাৎ সচেতনতা, সক্রিয়তা, এবং সংগঠিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, নীতি মেনে চলা এবং সিন্ডিকেট প্রতিরোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করা উচিত।