নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা ঘিরে সংকট সৃষ্টি হয়। ৭টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তিন দফা পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সরকার নতুন সময়সূচি করে পরীক্ষা নিতে চাইলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। বাতিল পরীক্ষাগুলোতে সবাইকে ‘অটোপাস’ এবং এসএসসিতে ওই বিষয়ে পাওয়া নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়। এতে সবার ধারণা ছিল পাসের হার ও জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে।
তবে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, পাসের হার উল্টো কিছুটা কমেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১১টি শিক্ষা বোর্ডে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ তা এবার কমে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমেছে। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ।
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অবশ্য এবার ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফল বলে স্বীকৃত জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। এবার ১১টি বোর্ডে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সেই হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন।
প্রকাশিত ফলাফলের সারসংক্ষেপের তথ্যানুযায়ী-এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। তবে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন। সারাদেশের ৯ হাজার ১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২ হাজার ৬৯৫টি কেন্দ্রে।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ছাত্রদের গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন এবং ছাত্রী ৮০ হাজার ৯৩৩ জন।
কোন শিক্ষা বোর্ডে কত পাস
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে ফলাফলে এবার চমক দেখিয়েছে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে পাসের হারে তলানিতে রয়েছে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডটিতে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
শীর্ষে থাকা সিলেট বোর্ডের পরেই রয়েছে বরিশাল বোর্ড। বরিশালে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তার কাছাকাছি অবস্থানে রাজশাহী বোর্ডও। রাজশাহীতে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ।
পাসের হারে এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ঢাকা বোর্ড ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, যশোরে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।
তবে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি মিলিয়ে ১১টি বোর্ডের হিসাবে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এ বছর এ বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এরপরই অবস্থান করছে কারিগরি বোর্ড, সেখানে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৯ শতাংশ।