Saturday , January 18 2025

জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবার অস্তিত্বের জন্য হুমকি: ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিনিধি:
জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবার অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, আমাদের সবার এই পৃথিবীতে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবার অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। এই গ্রীষ্মে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গকারী তাপদাহ আমাদের জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কথা স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে এ অধিবেশন শুরু হয়।

ড. ইউনূস বলেন, আমাদের যা প্রয়োজন তা হলো, জলবায়ু সম্পর্কিত ন্যায়বিচার। যাতে করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, উদাসীন আচরণ কিংবা এর মাধ্যমে সাধিত ক্ষতির বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দায়বদ্ধ করা যায়।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলো অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছি, প্যাথোজেনের পরিবর্তনের ফলে নতুন রোগ বাড়ছে, কৃষি ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে, ক্রমহ্রাসমান পানিসম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছে আমাদের বাসযোগ্যতাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে প্রতিনিয়ত। ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষুদ্র কৃষক এবং প্রান্তিক পর্যায়ে জীবিকা অন্বেষণকারীরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আমি আজ যখন এই বিশ্ব সভায় কথা বলছি, তখন বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে ৫০ লাখেরও অধিক মানুষ তাদের জীবদ্দশায় হওয়া সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের দেখিয়েছেন যে, বিদ্যমান পরিক্রমা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা দুই দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তাই, বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি।

সব রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে: ড. ইউনূস
তিনি বলেন, উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োগ ও অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে লস অ্যান্ড ড্যামেজকে কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই ভাবে আমাদের প্রয়োজন প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। নির্দিষ্ট করে বললে, আমাদের দরকার জীবনরক্ষাকারী প্রযুক্তি, বিশেষত কৃষি, পানি এবং জনস্বাস্থ্য খাতে, যেখানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভাবন এবং সমাধান ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করতে পারে। জলবায়ু সংকটের মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি সুসংহত করতে আমাদের যুগপৎভাবে কাজ করতে হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন কার্বনমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে মনোযোগী হচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে এ ধরনের পরিবর্তনের সুফলভোগী করতে হলে নেট-জিরো পৃথিবীর লক্ষ্য সমানভাবে পূরণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সঙ্গে নিতে হবে। তা না হলে, পারস্পরিক দায়িত্ববোধের মাধ্যমে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জনে আমাদের সর্বজনীন অঙ্গীকার পূরণে আমরা পিছিয়ে পড়বো।

ড. ইউনূস বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে, সমগ্র বিশ্ব একসঙ্গে তিন শূন্যর ধারণা বিবেচনা করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা – শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন করতে পারি। যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি তরুণ-তরুণী চাকরিপ্রার্থী না হয়ে বরং উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে। তারা যেন সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিজ নিজ সৃজনশীলতার বিকাশ করতে পারে। যেখানে একটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ সামাজিক সুফল, অর্থনৈতিক মুনাফা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতার মধ্যে একটি চমৎকার ভারসাম্য আনতে মনোযোগী হতে পারে। যেখানে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তি ভোগবাদী জীবনধারা থেকে উত্তরণ করে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সৃজনশীল শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, এই সময়ে প্রয়োজন উন্নত ও উন্নয়নশীল সব দেশ ও বিভিন্ন অংশীদারদের মধ্যে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন মূল্যবোধ এবং নতুন একতা। সামগ্রিকভাবে এ লক্ষ্য অর্জনে জাতিসংঘ ব্যবস্থা, জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সরকারসমূহ, সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অংশীজন (এনজিও) এবং দাতব্য সংস্থাগুলোকে কাজ করতে হবে একসঙ্গে। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে সামাজিক ব্যবসাকে স্থান দিলেই নিচের অর্ধেকাংশ মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। এই পদক্ষেপ একই সঙ্গে জলবায়ুর ধ্বংসাত্মক গতিকে সফলভাবে রোধ করতে পারে প্রচলিত বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে।

About somoyer kagoj

Check Also

থার্টি ফার্স্ট নাইটে শুধু শব্দদূষণেই ৯৯৯ এ হাজারের বেশি ফোন

নিজস্ব প্রতিনিধি:নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিকট শব্দে আতশবাজি-পটকা ফাটিয়ে উদযাপিত হয়েছে নতুন বছর ২০২৫। রাত ১২টা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *