কামরুন নাহার:
কালামা লেখক:
শ্রেণীকক্ষে রাজনীতির ক্ষতিকারক প্রভাব শিক্ষার পরিবেশে রাজনৈতিক পক্ষপাত বা এজেন্ডা থাকা থেকে উদ্ভূত ক্ষতিকর প্রভাবগুলিকে বোঝায়। যখন রাজনীতি শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করে, তখন তা শিক্ষকতা ও শেখার উভয় প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে নিম্নলিখিত কয়েকটি উপায়ে:
1. পক্ষপাত ও মগজধোলাই: যদি কোনো শিক্ষক ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বিশ্বাসকে প্রচার করেন, তাহলে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মগজধোলাইয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে, যা সমালোচনামূলক চিন্তা উৎসাহিত করার পরিবর্তে ঘটে। এতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন মতামত গঠনের এবং নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা সীমিত হয়।
2. বিভাজন: শ্রেণীকক্ষে রাজনীতি আনার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হতে পারে। আলোচনা উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে, যা খোলামেলা সংলাপ, পারস্পরিক সম্মান এবং বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়নকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
3. বিচিত্র মতামতের দমন: যখন একটি রাজনৈতিক মতবাদ প্রাধান্য পায়, তখন বিরোধী মতামতকে দমন করা হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পরিচিত হওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে, যা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
4. মূল শেখা থেকে মনোযোগ সরানো: রাজনীতি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য—জ্ঞান অর্জন, দক্ষতা এবং সমালোচনামূলক চিন্তার ক্ষমতা বিকাশের কাজ থেকে মনোযোগ সরাতে পারে। এটি একাডেমিক বিষয় এবং জ্ঞানীয় দক্ষতার উন্নয়ন থেকে ফোকাস সরিয়ে নিতে পারে।
5. আস্থার ক্ষয়: যদি শিক্ষার্থীরা অনুভব করে যে তাদের রাজনৈতিক মতামত অন্যায়ভাবে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে বা উপেক্ষা করা হচ্ছে, তবে এটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে আস্থা ক্ষুণ্ণ করতে পারে, যা শ্রেণীকক্ষের পরিবেশ এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ককে দুর্বল করতে পারে।
এই ক্ষতি এড়ানোর জন্য, শ্রেণীকক্ষে সমালোচনামূলক চিন্তা বিকাশ, সম্মানজনক সংলাপকে উৎসাহিত করা এবং রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল বিষয়গুলির প্রতি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখা উচিত। শিক্ষার লক্ষ্য হওয়া উচিত শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান করা, কোনো নির্দিষ্ট মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া নয়।
বস্তুত সঠিক শিক্ষার প্রসারেই হতে পারে সবধরনের সংস্কার জড়তা দূর করে সর্বত্তোম পন্থায় জাতিকে গতিশীল করা।সাধারণত জাতি গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা দুদিক থেকে বিবেচ্য…..
প্রথমত: ছাত্ররা জীবন গঠনে তৎপরতা দেখিয়ে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে।
দ্বিতীয় :তারা প্রত্যক্ষভাবে জাতিগঠনের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে।
অথচ অশুভ ছায়া এ আকাঙ্ক্ষার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাইতো আজকাল অনেক ছাত্ররাই রাজনীতির নামে বিভিন্নরাজনৈতিক দলের অঙ্গ হিসাবে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন রকম মাস্তানি গুন্ডামির আশ্রয় নিচ্ছে, এবং অস্ত্রের ঝন-ঝনানিতে, রাজনীতির চাপ প্রয়োগে, চাঁদাবাজি আর মাস্তানির দৌরাত্ম্যে শিক্ষাঙ্গনকে পরিণত করছে অপ্রতাশিত সন্ত্রাসাঙ্গনে।এতে করে শিক্ষাঙ্গনে রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে অস্ত্রের খেলায়।
তাছাড়া শিক্ষাঙ্গনে দীর্ঘমেয়াদী সহিংস প্রবণতাও দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন দাপটের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে, কেউ বেছে নিচ্ছে বোমা নিক্ষেপের পথের মত অসংখ্য বিপদজনক পথ এবং আদর্শগতভাবে চিহ্নিত একটি তৃতীয় দল পুলিশ ও বিরোধী পক্ষকে কাবু করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও ছুরি দিয়ে প্রতিপক্ষের ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। শিক্ষাঙ্গনে রেগিং এর ফলেও আমরা হারাচ্ছি আমাদের অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী।
তবে সঠিক বিধিতে পতিপাদন করলে অদ্ভূত ফল প্রদাহ করবে। যেমন…এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষা পতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা সহ অনিদিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বদ্ধ না করা ও পরিক্ষা পদ্ধতি সম্পুর্ণ দুনীতিমুক্ত করা এবং শেণিকক্ষে শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া এবং সকল প্রকার রাজনৈতিক সংগঠন শাসন থেকে শিক্ষাঙ্গকে মুক্ত রাখা আর বুদ্ধিমত্তা তখনই প্রদর্শিত হবে যখন বর্তমান ও ভবিষ্যতে প্রজন্মকে উন্নত করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত।আর যিনি সুরক্ষাত্নক তিনি সমস্যা উৎপন্ন হওয়ার আগেই তার সমাধান খুঁজে নেন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্কটি পারস্পরিক সম্মান, আস্থা এবং খোলামেলা যোগাযোগের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। এর মূল দিকগুলো হল:1. সম্মান ও সহানুভূতি: শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পার্থক্য এবং চাহিদাগুলিকে সম্মান করা, একইসাথে শিক্ষার্থীদেরও শিক্ষকের কর্তৃত্ব এবং পথপ্রদর্শকের ভূমিকাকেও সম্মান করা উচিত।
2. সহায়তা ও উৎসাহ: শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করা, যাতে তারা নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে এবং নতুন ধারণা অন্বেষণ করতে নিরাপদ বোধ করে এবং একটি ইতিবাচক শেখার পরিবেশ গড়ে তোলা।
3. সহযোগিতা: শেখা একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া। শিক্ষকরাও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিখতে পারেন, এবং শিক্ষার্থীরাও তাদের শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে, যার ফলে একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে।
4. পথপ্রদর্শন ও পরামর্শ: শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করা, যাতে শিক্ষার্থীরা সমালোচনামূলক চিন্তা, সমস্যার সমাধান এবং নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশ করতে পারে।
5. সুস্পষ্ট সীমানা: বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহায়ক সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ হলেও, পেশাদার সীমা বজায় রাখা প্রয়োজন যাতে শেখার পরিবেশটি মনোযোগী এবং সম্মানজনক থাকে।
নিসন্দেহে বলা যায় এই ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক একটি কার্যকর, আকর্ষণীয় এবং স্বাস্থ্যকর শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা তৈরি করতে সহায়ক হবে।
আমরা চাই পরস্পরের প্রতি মমতা,ভালোবাসা এবং সহনশীলতার মধ্য দিয়ে শিক্ষাঙ্গন এগোবে। চাই সুস্থ, সুন্দর ও স্থিতিশীল শিক্ষাঙ্গন। আমরা চাই আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ যারা আমাদের সন্তানদের আলোর পথ দেখায়, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সঠিক সমাধান খুঁজে,ওনাদেরকে দলমত নির্বিশেষে সবাই শ্রদ্ধা করুক।
চাই নিয়ম শৃঙ্খলার মাধ্যমে শিক্ষাদান চলবে, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেশন জট দূর হবে এবং শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার দিকে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী স্বার্থের উধ্বে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের জন্য সবাইকে উদ্ভুদ্ধ করতে পারি।
আমরা চাই শিক্ষা দানকারীরা, তাদের মধ্যেকার বিভক্তির টেবিলটা সম্পূর্ণভাবে উল্টে দেবে যাতে মধ্যকার যে দূরত্ব রয়েছে তা ভেঙে গুড়িয়ে যাবে এবং এক ছাদের নিচে একতা আর সমন্বয়ের সহিত কাজ করবে। আর তাতে পুরো পৃথিবী মাত্র একটা প্রজন্মের মধ্যেই এমন একটা অবস্থানে পৌছাবে, যেখানে তারা যা অনুসরন করতে চাইবে এবং কল্যাণকর যা কিছু সৃষ্টি করতে চাইবে তই তারা পারবে।
আমাদের এই জীবন দান করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তিনিই আমাদের মৃত্যু ঘটাবেন… আবার তিনিই আমাদের পুনরুত্থিত করবেন।এ সত্যকে উপলব্ধি করে সকল দুনীতি দমনে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক এবং গুণীজন সকলের উচিত সকল অনিয়মের মূলোৎপাটন করে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে মূল সমস্যাগুলোর অন্যতম অভিশাপ থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করা। তবেনিরসনে সরকারি উদ্যোগ যেমন প্রয়োজন তেমনি সকলের সহযোগিতা।যেহেতু বাস্তবমুখী বাধ্যতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা পেতে, সকল অনিয়মের মূলোৎপাটন প্রয়োজন।
আসুন আমরা সচেতন হই, সতর্ক হই এবং শিক্ষাঙ্গনের ষড়যন্ত্রের মূলে কুঠারাঘাত করি, যাতে কোন অশুভ রাজনৈতিক সংগঠন শিক্ষাঙ্গনকে শাসন করতে না পারে। কারণ সংগ্রাম, ত্যাগ, তিতিক্ষা এবং আত্নবিসর্জনের মাধ্যমে নব নব আবিষ্কারের অফুরন্ত সম্ভাবনায় আমরাই পারি শিক্ষাঙ্গনকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে।