ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা রাখা এবং শিক্ষার্থীদের বহিস্কার করার হুমকি দেওয়া ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক এখন রয়েছেন বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে। পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এই প্রধান শিক্ষক ১৫ বছর ধরে এই স্কুলে একক কর্তৃত্ব চালিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
শতবর্ষী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে, প্রধান শিক্ষকের বেপরোয়া ও একচ্ছত্র জমিদারিত্বের কাছে অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ছাত্র-জনতা ও স্কুলের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তিনি স্কুল থেকে বিতাড়িত হওয়ার উপক্রম হয়েছিলেন, কিন্তু স্থানীয় বিএনপির সাবেক এমপি জাহিদুর রহমানকে ম্যানেজ করে তিনি আবারও স্কুলে অবস্থান ফিরে পেয়েছেন। এই জাহিদুর রহমান ২০১৮ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার অবৈধ সংসদে শপথ নিয়েছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে দীর্ঘদিন ধরে আরাম-আয়েশে আছেন, তেমন কোন নির্যাতনের শিকার হননি। অথচ এই এলাকার শত শত নেতাকর্মি আওয়ামী মাফিয়া সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়েছেন। গত উপজেলা নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন, সে সময় অর্থের বিনিময়ে এ কাজটি করেছেন বলে জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। এ নিয়ে স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মিদের মাঝে তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, তীব্র চাপের মুখে পড়ে গত ২২ আগস্ট স্ত্রীসহ গভীর রাতে প্রধান শিক্ষক মফিজুল হক বিএনপির সাবেক এমপি জাহিদুর রহমানের বাসায় যান। সেখানে মোটা অংকের টাকা প্রদানের মাধ্যমে আপস-রফা করেন। দুদিনের মধ্যে জাহিদুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করেন। এর পর ২৫ আগস্ট থেকে প্রধান শিক্ষক আবার আগের মতোই স্কুলের রাজত্ব ফিরে পান।
প্রধান শিক্ষক ২০০৯ সালের শেষের দিকে এই স্কুলে যোগদান করার পর স্কুলটিকে এক অনিয়ম দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। তিনি যোগদানের পর থেকে নানা রকম অনিয়ম, দুর্নীতি করে ভুলের আয়ের টাকা স্কুলের ফান্ডে জমা না করে সেই টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে তাদের নিকট হতে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে। সেই টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন।
স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ, অতিথি শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশনে বেশি টাকা নেওয়া, গাছ বিক্রি, প্রশংসাপত্র নিতে টাকা এমনকি মসজিদের জন্যও শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়েছে। এসব টাকা স্কুল তহবিলে জমা না দিয়ে তিনি আত্মসাৎ করে নিজে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। কৌশলে নিজের নামে লিজ নিয়ে স্কুলের জমিতেই তিনি গড়ে তুলেছেন ৬২টি বাণিজ্যিক দোকান, পীরগঞ্জে শহরে ৩টি বহুতল ভবন নির্মাণ এবং প্রায় ৬ একর কৃষি জমি ক্রয় করেছেন। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে নগদ টাকাসহ প্রতি মাসে ৪০ হাজার ডিপিএস জমা করেন।
দীর্ঘদিন ধরে রাম রাজত্ব চালিয়ে আসা এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন রুখে দিতে দমনপীড়ন চালানো প্রধান শিক্ষক মফিজুল হককে রক্ষা করতে মাঠে নেমেছেন পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি জাহিদুর রহমান। এ অনৈতিক কাজে এলাকায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।