Thursday , November 7 2024

ছাত্র আন্দোলন: ঢল নেমেছে শহীদ মিনারে

নিজস্ব প্রতিনিধি:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জড়ো হয়েছে শিক্ষার্থীসহ হাজারো আন্দোলনকারী।

এই কর্মসূচি ঘিরে শনিবার বেলা ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।

সকালে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে দুপুরের পর শহীদ মিনারমুখি যাত্রা শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সেখানে উপস্থিত হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এক পর্যায়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।

শহীদ মিনারের চর্তুদিকে লোকে-লোকারণ্য হওয়ায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ছাত্রদের সঙ্গে চলে এসেছেন তাদের অভিভাবক, বন্ধু, স্বজন ও পরিবারের সদস্যরাও।

জমায়েত একদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়িয়ে পুরাণ ঢাকার চানখারপুল পর্যন্ত। পূর্বদিকে দোয়েল চত্বর ছাড়িয়ে ও উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল টাওয়ার পার করেছে জমায়েত।

সমাবেশে স্লোগান চলে, ‘দফা এক, দাবি এক-শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘৯ দফা বাদ দে, এক দফার ডাক দে’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘আবু সাইদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ইত্যাদি।

এর আগে শহীদ মিনারমুখি মিছিলে ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দফা এক দাবি এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।

শুক্রবার সারাদেশে ‘গণপদযাত্রা’ থেকে শনিবার বিক্ষোভ ও রোববার থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে।

সকালে ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি, মিরপুর, শান্তিনগর, আফতাবনগর, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, শনির আখড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। কোথাও কোথাও এই কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকরা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েতের আগে শিক্ষার্থীরা সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জড়ো হয়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েতের আগে শিক্ষার্থীরা সকালে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জড়ো হয়।

শুক্রবার উত্তরা এলাকায় জমায়েতে সংঘর্ষ হলেও এদিন পরিস্থিতি সকাল থেকে শান্ত। তবে বিক্ষোভের প্রায় সব পয়েন্টে পুলিশকে সতর্ক অবস্থান দেখা গেছে।

গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘর্ষে যে-সব হত্যাকাণ্ড হয়েছে, সেগুলোর বিচারের দাবি আছে শিক্ষার্থীদের। সংঘাতের পর শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিটি মৃত্যুর তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা নেওয়ার কথাও বলেছেন একাধিক বক্তব্যে।

শিক্ষার্থীদেরকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছেন সরকারপ্রধান। বলেছেন, “গণভবনের দরজা খোলা। কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই। আমি সংঘাত চাই না।”

আন্দোলনের মধ্যে যেসব ছাত্র গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদেরকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান সরকার প্রধান।

তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা। শনিবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নাহিদ ইসলাম তার ফেইসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, “খুনি সরকারের কাছে বিচার চাওয়া বা সংলাপে বসারও সুযোগ আর নেই। ক্ষমা চাওয়ার সময়ও পার হয়ে গেছে। যখন সময় ছিল তখন সরকার ব্লক রেইড দিয়ে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করেছে। আখতার হোসেন, আরিফ সোহেলসহ রাজবন্দিদের কারাগারে রেখে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতায় যাব না।”

শুক্রবার থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকার পতনের দাবি জানাচ্ছে কেউ কেউ।
শুক্রবার থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরকার পতনের দাবি জানাচ্ছে কেউ কেউ।

২০১৮ সালে সরকার চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্র জুনের শেষে হাই কোর্ট অবৈধ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ের শুরুতে মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রথমে পরিপত্র ফিরিয়ে আনতে, অর্থাৎ কোটা না রাখার দাবিতে সোচ্চার হলেও পরে সংস্কারের দাবি সামনে আনে।

গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে সংঘাত হয়। এতে চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও একজন হকার এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়।

পরদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে এসে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষিত হয়।

সেদিন ঢাকার উত্তরা ও বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানির পর পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। সেদিন দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একযোগে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা হয়। এসব হামলায় শিক্ষার্থীদের বাইরে অন্য পক্ষের সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছে সরকার।

১৮ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সংঘর্ষ সহিংসতা চলতে থাকে। বিশেষ করে ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর এলাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

এই পাঁচ দিনের সহিংসতায় সরকারের পক্ষ থেকে দেড়শ মানুষের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে, আহত কয়েছে আরও কয়েকশ মানুষ।

সংঘর্ষ থামার পর পুলিশ ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেপ্তার অভিযানে নামার কথা জানায়, কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার অভিযান বন্ধ, হত্যার বিচারসহ নানা দাবি জানানো হতে থাকে। দফায় দফায় আসছে কর্মসূচি।

About somoyer kagoj

Check Also

সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিলেন প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি: সাফজয়ী নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।  শনিবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *