রেজাউল করিম. কোটচাঁদপুর, (ঝিনাইদহ) :
হারাতে যাচ্ছে কোটচাঁদপুরের ঘাঘা আশ্রয়নের ২০ পরিবার তাদের শেষ সম্বল আবাদি জমি। সোমবার দুপুরে তীব্র তাপদহ উপেক্ষা করে জলের বিলের ওই আবাদি জমি রক্ষার্থে জমির পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন তারা।
আশ্রয়নের সভাপতি তোয়াজ উদ্দিন বলেন, গেল ২০০৬ সালের দিকে আমরা ২০ টি পরিবার এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে বসবাস শুরু করি। ওই সময় কুশনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন ফারুক হোসেন। ওনার সহযোগিতায় ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের নিকট জলের বিলের জমি পেতে আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের ১২ টি পরিবারের ২৪ বিঘা জমি মৌখিক ভাবে আবাদ করার অনুমতি দেন। সে থেকে আমরা দীর্ঘ ১৮ বছর যাবৎ ওই জমিতে আবাদ করে জবিকা নির্বাহ করে আসছি।
তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে জানতে পারলাম বিলটি ইজারা দেয়া হয়েছে। এখন তারা মেপে আমাদের জমিও দখলে নিচ্ছেন। এই জমিটুকু আমাদের শেষ সম্বল। এটা হারালে আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। জমি থেকে উচ্ছেদ না করতে তিনি সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
আশ্রয়নের আরেক সদস্য বাসুদেব দাস। তিনি ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন,বউ,বাচ্চা নিয়ে আমার সংসার। ওই জমিটুকু চাষ করে যা পাই তাই দিয়ে সংসারের সবাইকে নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছি। আজ জমিটুকু হারাতে বসেছি। শুনতে পাচ্ছি কারা ইজারা পেয়েছেন। এখন মেপে লাল পতাকা উড়িয়ে দিচ্ছেন ভূমি অফিসের লোকজন। ওই জমি থেকে উচ্ছেদ না করতে তিনিও সরকারের কাছে আকুতি জানিয়েছেন।
একইভাবে আকুতি জানিয়েছেন আশ্রয়নের বাসিন্দারাও। তারা সোমবার দুপুরে ওই আবাদি জমি রক্ষার্থে তীব্র তাপদহ উপেক্ষা করে জমির উপর মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন। তারা জীবন দিয়ে হলেও তাদের শেষ সম্বল আবাদি জমি টুকু রক্ষা করবেন। প্রয়োজনে তারা প্রধান মন্ত্রীর দপ্তরেও যাবেন বলে উল্লেখ করেন মানববন্ধনে।
ফুলবাড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারন সম্পাদক দশরত বিশ্বাস বলেন, কোটচাঁদপুর উপজেলার কুশনা ইউনিয়নের জলের বিল। এ বিলের ৩৫ একর ৪৪ শতক জমি গেল দুই বছর আগে আমরা ইজারা পেয়েছি। তবে আমরা পুরো জমি বুঝে না পাওয়ায় সরকারের কাছে জমি বুঝিয়ে দিতে আবেদন করি। এর পে্ক্ষিতে জমি মেপে লাল পাতাকা উড়িয়ে দিচ্ছেন ভূমি অফিস। এখন আমরা ওই জমি ভেকু দিয়ে মাটি কেটে জলকর বানিয়ে মাছ চাষ করবো।
তিনি বলেন,আশ্রয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নাই। সরকার আমাদের পাওনা ইজারা প্রাপ্ত জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাই আমরা দখল নিচ্ছি। তিনি আর বলেন, দুই বছর হতে চললো আমরা ইজারা পেয়েছি, এখন পর্যন্ত আমরা তাদের জমিতে যাই নাই। কারন তখন আমরা জমি বুঝে পাই নাই।
কুশনা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারি কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়নে অবস্থিত জলের বিল। বিলটি কুশনা মৌজার। ওই বিলের জমি রয়েছে ৩৫ একর ৪৪ শতক। গেল ২০২৩ সালের দিকে ফুলবাড়ি মৎসজীবি সমবায় সমিতি বিলটির ইজারা নেন। সে থেকে তারা দখলে নিলেও পুরো জমি তাদের দখলে ছিল না। এ কারনে তাদের আবেদনের পেক্ষিতে জমি মেপে ওই সমিতিকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
আশ্রয়নের বাসিন্দারা কিছু জমি আবাদ করতেন, এটা আপনি জানেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে বিলের ইজারা ছিল না। তারা আবাদ করতেন। এখন সরকার একটি সমিতির কাছে বিলটি ইজারা দিয়েছেন। এখন বিলের জমি তাদের ছাড়তে হবে। এ ছাড়া তাদের কাছে কোন কাগজ পত্রও নাই বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উছেন মে বলেন, ওনারা আমার কাছে এসেছিল। জমি মাপা নিয়ে কথা হয়। তারা মাপার ব্যাপারে কোন আপত্তি করেননি। তিনি বলেন, তারা মানববন্ধন করেছেন কিনা জানেন না। এটা ইউনিয়ন নায়েব বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।