Monday , February 17 2025

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ পুলিশি বলপ্রয়োগের ভয়াবহতা জানালেন শিক্ষার্থীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের অস্টিনে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ক্যাম্পাসে যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৩০ জনের একটি দল ঢুকছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে নিজের অনুভূতি কেমন ছিল, সে সম্পর্কে জানাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যায়টির শিক্ষার্থী আলিশবা জাভেদ। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি’।

জাভেদ ও তার কয়েক শ সহপাঠী ক্যাম্পাসে চুনাপাথরের ৯৪ মিটার উঁচু টাওয়ারের ছায়ার নিচে জড়ো হয়েছিলেন। গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে ক্লাস বর্জন কর্মসূচির অংশ হিসেবেই সেখানে সমবেত হওয়া তাদের।

জাভেদের হিসাবে, ক্যাম্পাসে আগে থেকেই অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। ওই দিন তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ৩০ জনের মতো দলটি। তারা সজ্জিত ছিল দাঙ্গা পুলিশের পোশাকে। তিনি বলেন, তাদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু ভেতরে ছিল টানটান উত্তেজনা। পুলিশ সদস্যরাও তাঁদের দিকে এগোতে শুরু করেন। ২২ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘এটিই ছিল প্রথম মুহূর্ত, যখন আমি সত্যি ভয় পেয়ে যাই।’

২৪ এপ্রিল দিনটিতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে শুরু হয় দুই পক্ষের সংঘর্ষ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের দৃশ্যগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে অনলাইনে। একই সময় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও চলছিল অনুরূপ বিক্ষোভ।

২০১৭ সালে অঙ্গরাজ্যটির গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এক আইনে সই করেন। এ আইনে ইসরায়েলকে বয়কট করা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরে আইনটি আরও কঠোর করার পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় সরকার।

এর বাইরে চলতি বছরের শুরুতে একটি আইন কার্যকর করেছে টেক্সাস সরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ আইনে তাদের ‘ডাইভারসিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন (ডিইআই)’ দপ্তর বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়কর্মী আল–জাজিরাকে বলেছেন, ওই আইনের কারণে ডিইআই কর্মীরা চলে যেতে বাধ্য হওয়ায় ক্যাম্পাসগুলোতে এখন আগের চেয়ে কম নিরাপদ হয়ে পড়েছেন নানা বর্ণের শিক্ষার্থীরা।

সব বাধা উপেক্ষা করে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

২৯ এপ্রিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তাদের ওপর পিপার স্প্রে ও প্রচণ্ড শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় তারা বিক্ষোভকারীদের ঘিরে ফেলে ও চিৎকার করতে করতে অনেককে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়।

হিবা ফারুকি ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী। জানাচ্ছিলেন তার অভিজ্ঞতা, বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে তিনি আহত হন। তার হাঁটু থেকে রক্ত ঝরছিল।

ভীষণভাবে আহত না হওয়ায় হিবা নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন। তিনি বলেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে পুলিশ ডেকেছে, আবার আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় চিকিৎসক ডেকেছে, বিষয়টি ভেবে হকচকিত তিনি।

ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকায় শিক্ষার্থী, আইনজীবী ও পরামর্শকেরা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। আল–জাজিরাকে তারা বলেন, টেক্সাস সরকার তাদের ধ্যানধারণা বদলাতে বাধ্য করছে ও সরকারের স্পষ্ট বৈরিতার শিকার হচ্ছেন তারা। হিবা বলেন, ‘সংখ্যালঘুদের তাড়াতে সহিংসতাকে ব্যবহার করছে টেক্সাস সরকার।’

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শিক্ষার্থীদের এমন ব্যাপক বিক্ষোভ এ শতকে আর দেখা যায়নি। ভিয়েতনাম যুদ্ধে দেশটির অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে গত শতকের ষাটের দশকের শেষ ভাগে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, সেটিই এবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে কলাম্বিয়াসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান শিক্ষার্থী আন্দোলন। ১৯৭০ সালে ওহাইওতে ওই বিক্ষোভে ন্যাশনাল গার্ডের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন চার শিক্ষার্থী। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শুরু হয় শিক্ষার্থীদের ধর্মঘট ও বন্ধ হয়ে যায় কয়েক শ বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসরায়েল এ ছাত্র বিক্ষোভকে ইহুদিবিদ্বেষ বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে ইসরায়েলের সমালোচকেরা বলছেন, বিরোধীদের কণ্ঠরুদ্ধ করতেই দেশটির এমন অভিযোগ।

চলমান বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় গত ১৭ এপ্রিল। তারা গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের অবসান দাবি করছেন। ফিলিস্তিনের উপত্যকাটিতে গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর নারকীয় অভিযানে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

About somoyer kagoj

Check Also

প্রত্যেকটি প্রদেশে চলছে ধর পাকড় কঠিন সময়ের মুখোমুখি মালয়েশিয়া প্রবাসীরা

মোঃ এলাহী মালয়েশিয়া থেকে: গেলো বছরের ৩১ ডিসেম্বর সাধারণ ক্ষমার মেয়াদ শেষ হতে না হতেই …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *