Saturday , January 18 2025

রুদ্ধশ্বাস ক্লাসিকোয় জিতে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেল রেয়াল

স্পোর্টস ডেস্ক:

শিরোপা লড়াইয়ে নতুন আশার সঞ্চার করার সুযোগ ছিল বার্সেলোনার। দুই দফায় এগিয়ে গিয়ে দারুণ সম্ভাবনাও জাগাল তারা। কিন্তু, হার না মানা মানসিকতায় আরও একবার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লিখল রেয়াল মাদ্রিদ। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতে লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে বড় এক ধাপ এগিয়ে গেল কার্লো আনচেলত্তির দল।

সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে রোববার রাতের ক্লাসিকোয় ৩-২ গোলে জিতেছে রেয়াল। লিগ টেবিলে বার্সেলোনার চেয়ে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেছে রেকর্ড চ্যাম্পিয়নরা।

আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা টানেন ভিনিসিউস জুনিয়র। ফেরমিন লোপেসের নৈপুণ্যে সফরকারীরা ফের এগিয়ে যাওয়ার পর সমতা টানেন ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা লুকাস ভাসকেস। আর শেষ দিকে ব্যবধান গড়ে দেন জুড বেলিংহ্যাম।

গত অক্টোবরে প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে বেলিংহ্যামের জোড়া গোলে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল আনচেলত্তির দল। এরপর জানুয়ারিতে ভিন্ন প্রতিযোগিতায় আবারও মুখোমুখি হয় দল দুটি; স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করে শিরোপা জেতে মাদ্রিদের দলটি।

ওই দুই হারের ক্ষতে প্রলেপ দিতে এবং লিগ শিরোপার লড়াইয়ে টিকে থাকার লক্ষ্যে শুরুটা অসাধারণ করে বার্সেলোনা। ষষ্ঠ মিনিটে কর্নারে উড়ে আসা বল দূরের পোস্টে পেয়ে অনেকটা লাফিয়ে হেডে দলকে এগিয়ে নেন ডেনমার্কের ডিফেন্ডার ক্রিস্টেনসেন।

রুদ্ধশ্বাস ক্লাসিকোয় জিতে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেল রেয়াল

মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোতেও ষষ্ঠ মিনিটে ইলকাই গিনদোয়ানের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা।

দুই মিনিট পরই পাল্টা জবাব দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ পায় রেয়াল। কিন্তু আট গজ দূর থেকে উড়িয়ে মারেন ভিনিসিউস। পরের মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর একটি হাফ-চান্স পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি লামিনে ইয়ামাল।

সপ্তদশ মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে একজনকে কাটিয়ে ডান দিক দিয়ে বার্সেলোনার বক্সে ঢুকে পড়েন ভাসকেস। তরুণ ডিফেন্ডার পাউ কুবারসিকে ফাঁকি দিয়ে বল সামনেও বাড়ান রেয়াল তারকা; কিন্তু পরক্ষণেই কুবারসির বাড়ানো পায়ে লেগে তিনি পড়ে গেলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

ভিনিসিউসের স্পট কিক খুব ভালো হয়নি, গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনও ঠিক দিকে লাফান; কিন্তু গতির সঙ্গে পেরে ওঠেননি তিনি। সমতার স্বস্তি ফেলে রেয়াল শিবিরে।

২৮তম মিনিটে বার্সেলোনার ফের এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সম্ভাবনা জাগে। রাফিনিয়ার ক্রস ছয় গজ বক্সে পেয়ে বাঁ পায়ের দারুণ এক টোকা দেন ইয়ামাল, বল ছুটে যায় লক্ষ্যে, কোনোমতে গোললাইনে তা ঠেকিয়ে দেন লুনিন। বার্সেলোনার পক্ষ থেকে অবশ্য জোরাল আবেদন করা হয় যে, বল গোললাইন পেরিয়ে গেছে। তবে ভিএআরে কয়েকবার দেখেও এর পক্ষে শক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় বেঁচে যায় রেয়াল।

আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা লড়াইয়ে ৪৪তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পায় রেয়াল। ছোট ছোট পাসে শাণানো আক্রমণে বক্সের বাইরে বল পান লুকা মদ্রিচ। তবে শটটা যথেষ্ট জোরে নিতে পারেননি তিনি, সহজেই ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগেন।

রুদ্ধশ্বাস ক্লাসিকোয় জিতে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে গেল রেয়াল

খানিক পর আবারও বিপদে পড়তে যাচ্ছিল বার্সেলোনা। তাদের থেকে বল কেড়ে আক্রমণে ওঠেন ভিনিসিউস, ঢুকে পড়েন বক্সে। সামনে গোলরক্ষককে একা পেয়েও তিনি শট না নিয়ে বাঁ দিকে রদ্রিগোর উদ্দেশে বল বাড়ান, দারুণভাবে স্লাইড করে ঠেকিয়ে দেন ক্রিস্টেনসেন।

বিরতির ঠিক আগে একটা ধাক্কা খায় বার্সেলোনা। চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন ফ্রেংকি ডি ইয়ং, বদলি নামেন পেদ্রি।  

দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে চলতে থাকে লড়াই, দুই পাশেই সমানতালে হতে থাকে আক্রমণ। খুব ভালো কোনো সুযোগ যদিও কেউ তৈরি করতে পারছিল না।

৬৯তম ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বাঁ দিক থেকে ইয়ামালের বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট লুনিন ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি, আলগা বল পেয়ে সহজেই জালে পাঠান ক্রিস্টেনসেনের বদলি নামা লোপেস।

এই যাত্রায়ও ব্যবধান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। ৭৩তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে ভিনিসিউসের বাড়ানো বল বক্সে ফাঁকায় পেয়ে জোরাল হাফ ভলিতে গোলটি করেন ভাসকেস।

পাঁচ মিনিট পর দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে পরিষ্কার সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিউস। কিন্তু শেষটা আবারও ফলপ্রসু হয়নি তার, দুরূহ কোণ থেকে তার শট ঠেকিয়ে দেন টের স্টেগেন।

এই সুযোগ নষ্টের আগে-পরে দুই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে তুলে নেন আনচেলত্তি। রদ্রিগোর জায়গায় ডিফেন্ডার এদের মিলিতাও এবং ভিনিসিউসের বদলি হিসেবে ফরোয়ার্ড হোসেলু নামেন।

বাকি সময়ে প্রবল চাপ বাড়ায় রেয়াল। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে সাফল্যও পেয়ে যায় তারা। ভাসকেসের ডান দিক বাড়ানো বল ছয় গজ বক্সের মুখে পেয়েও ডামি করে ছেড়ে দেন হোসেলু, দূরের পোস্টে বল পেয়ে কোনাকুনি শটে দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান বেলিংহ্যাম।

রেয়ালের জার্সিতে অভিষেক মৌসুমেই নিজেকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছেন ২০ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। তবে বেশ কিছুদিন জালের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। প্রায় আড়াই মাস পর, ঘরের মাঠে ক্লাসিকোর মঞ্চে সেই খরা কাটালেন বেলিংহ্যাম।

এবারের লা লিগায় তার গোল হলো ১৭টি, রেয়ালের সর্বোচ্চ; সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সংখ্যাটা ২১। ৩২ ম্যাচে ২৫ জয় ও ৬ ড্রয়ে রেয়ালের পয়েন্ট হলো ৮১। সমান ম্যাচে ২১ জয় ও ৭ ড্রয়ে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে বার্সেলোনা।

About somoyer kagoj

Check Also

সিনিয়রদের অনুপস্থিতি তরুণদের মেলে ধরার সুযোগ: মিরাজ

স্পোর্টস ডেস্ক:২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *