আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
স্বাধীনতার ৭৭ বছরের ইতিহাসে বেশির ভাগ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা ভারতীয় কংগ্রেস এখন ক্ষয়িষ্ণু। দলটির রাজনৈতিক শক্তিমত্তার প্রমাণ মেলে ১৯৮৪ সালে। সেই সময় দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোনো দল ৫৪৩ আসনের মধ্যে ৪০০টির বেশি আসনে জিতেছিল। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টার্গেটও এমনই। নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিকে তিনি তাঁর দল ও জোটকে সেই টার্গেটই দিয়েছেন। তিনি একটি জনসভায় বলেছিলেন, ‘আবকি বার ৪০০ পার …।’ মানে, তিনি এবার একক দল হিসেবে ৪০০ আসন ছাড়াতে চান। গত নির্বাচনে বিজেপি জোট পেয়েছিল ৩৭০ আসন।
মোদি তাঁর লক্ষ্য পূরণে রাজনৈতিক দমনপীড়ন, গ্রেপ্তার কিংবা সরকারি সংস্থা ব্যবহার করে নানাভাবে বিরোধী দল ও শীর্ষ নেতাদের নাজেহাল করেছেন বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এমন বাস্তবতায় ১৯ এপ্রিল শুরু হয়েছে দেশটির সাত দফা লোকসভা নির্বাচন। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির দেশ পরিচালনায় দুর্বলতাগুলো কাজে লাগাতে পারেনি কংগ্রেস। খবর সিএনএন ও আলজাজিরার।
অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে মোদির বিজেপি আগামী পাঁচ বছরের জন্য টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হতে চলেছে। কারণ, মোদি তাঁর ১০ বছরের ক্ষমতায় থেকে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং হিন্দুত্ববাদকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন।
দেশটির বিরোধী নেতারা বলছেন, নির্বাচনের আগে গ্রেপ্তারসহ দমনপীড়ন চালিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করে ফেলেছে সরকার। একই সঙ্গে মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রসার দেশে বিপজ্জনক ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করছে। যদিও মোদি ও বিজেপি রাজনৈতিক দমনপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এটি ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা’ নেওয়ার ‘আইনি প্রক্রিয়া’ মাত্র।
অন্যদিকে, নির্বাচনে বিজেপিকে মোকাবিলা করতে ভারতীয় জাতীয় উন্নয়ন জোট বা ‘ইন্ডিয়া’ নামে ২৭ দলের জোট গঠন করে বিরোধীরা। কিন্তু সেই জোটও এখন নিষ্প্রাণ। ভারতীয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও সাংবাদিক আরতি জেরাথ বলেন, ‘আপনার যদি প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকে, তাহলে আপনি কেমন গণতন্ত্র চর্চা করছেন? এ কারণে মোদি জয়ী হবেন কিনা– এটা কোনো প্রশ্ন নয়।’ বিরোধী জোটের নেতৃত্বে থাকা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গত মাসে দিল্লিতে এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘যদি বিজেপি এই নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং সংবিধান পরিবর্তন করে, তাহলে দেশে আগুন জ্বলবে। এটা মনে রাখবেন।’ বিজেপি ও এর জোটসঙ্গীরা লোকসভার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এটি করতে পারলে তারা সংবিধান পরিবর্তন করবেন বলে আশঙ্কা করা হয়। তবে বিজেপি বরাবরই সংবিধান পরিবর্তনের পরিকল্পনার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে গত সপ্তাহে মোদি বলেন, ‘আমি কাউকে ভয় দেখানো বা দৌড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত নিই না। আমি জাতির সুষম উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নিই।’ কিন্তু বিজেপি ইতোমধ্যে প্রকাশ্যে ভারতের সরকারকে ধর্মনিরপেক্ষ ভিত্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। বিজেপির নেতৃস্থানীয় নেতারা দেশকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণার জন্য প্রকাশ্যে চাপ প্রয়োগ করছেন।
এদিকে নির্বাচনের আগে বিরোধী দলগুলো বেশ কিছু আইনি ও আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এর মধ্যে কর বিভাগ কংগ্রেসের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করে দেয়। অন্যদিকে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও জনপ্রিয় আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এএপির নেতা ও দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী অতীশি বলেন, ‘গণতন্ত্র স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি। ভারতের জনগণ সব সময় খুব সংবেদনশীলভাবে ভোট দিয়েছে এবং আমরা আশা করি, তারা এবারও তাই করবে।’