নিজস্ব প্রতিবেদক:
তীব্র গরমে সৃষ্ট দাবদাহ থেকে বাঁচতে রাস্তাঘাটে বের হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন অনেকে। রাজধানীর একটি ফাঁকা সড়ক/ ঢাকা পোস্ট তীব্র খরতাপে পুড়ছে সারা দেশ, জারি করা হয়েছে হিট অ্যালার্ট। রোদের তাপ এতই প্রখর যে বাইরে টেকা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। গরম থেকে রক্ষা পেতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। তাই ঢাকার অলিগলি ও কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে লোকসমাগম একেবারেই কম।
রোববার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। হাম্মদপুরের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই রোদে বেশিক্ষণ বাইরে থাকা যায় না। একটা কাজ ছিল, তাই বের হয়েছি। কাজ শেষ করেই দ্রুত বাসায় ফিরব।
বেসরকারি চাকরিজীবী রায়হান বলেন, পেটের দায়েই এমন গরমের মধ্যেও বের হতে হয়। বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে মনে হয় স্ট্রোক করব।
বাইরে লোকজন কম বের হওয়ায় বিক্রিবাট্টা কমেছে এলাকাভিত্তিক দোকানগুলোতে। মোহাম্মদপুর বসিলা রোডের চা বিক্রেতা বিল্লাল বলেন, এই গরমে কেউ চা খেতে আসে না। কেউ কেউ এসে ঠান্ডা পানি বা কোক খায়। মুদি দোকানিরা বলছেন, ভরদুপুরে ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই কম। মূলত সন্ধ্যার পর ক্রেতাসমাগম বৃদ্ধি পায়।
ঢাকা উদ্যানে অবস্থিত জিহান জেনারেল স্টোরের মালিক বলেন, বাইরে প্রচণ্ড রোদ, মানুষ খুব একটা বের হয় না। আগে এ সময়ে যে বিক্রি হতো, সেটি কমে গেছে। তবে, সন্ধ্যার পর বেচাবিক্রি বাড়ে।
গরমের প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে ঢাকার গণপরিবহনেও। সাধারণত সবসময় ঢাকার বাসগুলোতে যাত্রীর আধিক্য দেখা যায়। তবে আজ দুপুরের দিকে বেশিরভাগ বাসই প্রায় ফাঁকা দেখা গেছে।
যাত্রীরা বলছেন, গরমে বাসের ভেতরে হাঁসফাঁস পরিস্থিতি তৈরি হয়। ছাদের টিন থেকে গরম নেমে আসে। অনেকে বিকল্প উপায়ে বা রোদ চড়া হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছান। দুপুরের সময় একান্ত বাধ্য না হলে কেউ বাসে চড়ছেন না।
উত্তরাগামী বিকাশ পরিবহনের যাত্রী শেখ শামসুল বলেন, গরমে বাস জার্নি করা কষ্টকর। তবুও যেতে হবে বলে চড়েছি, এখন জ্যামে না পড়লেই বাঁচি। বাসটির হেলপার বলেন, মূলত গরমের কারণেই বাসে যাত্রীর পরিমাণ কমে গেছে। ভোগান্তি এড়াতে অনেকে বাসে না চড়ে সিএনজি বা মোটরসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঢাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। আর পাবনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী জেলাসহ খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের সব জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, ফেনী, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ বরিশাল বিভাগ এবং রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।
এই গরমের মধ্যে কিছু জায়গার জন্য স্বস্তির খবরও দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামীকাল সোমবার (২২ এপ্রিল) ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া, সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।