বিনোদন প্রতিনিধি:
‘সমসাময়িক শিল্পীদের চেয়ে আমার গানের সংখ্যা এত কম কেন? এই প্রশ্ন অনেকের। সবাইকে বলি, আমি ধীরে পথচলায় বিশ্বাসী। এর বেশি আর কী বলা যায় বলুন। আমি নিয়মিত গান প্রকাশের বাসনায় দিনরাত ছুটে বেড়াই না। কাউকে গান গাওয়ানোর অনুরোধও করি না। সে হিসেবে অন্যদের তুলনায় আমার গানের সংখ্যা কম হবে– স্বাভাবিক।
এখন প্রশ্ন হলো, গানের সংখ্যা দিয়ে সত্যি কি শিল্পীর মূল্যায়ন সম্ভব? আমার তা মনে হয় না। গুণীজনরা বলেন, ভালো একেকটি গান শিল্পীর জন্য সম্পদের মতো। আমিও তাই প্রতীক্ষায় থাকি ভালো কথা-সুরের জন্য।’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলোই বললেন কণ্ঠশিল্পী মৌমিতা তাশরিন নদী।
তাঁর কথা থেকে এটা বোঝা গেল, রাতারাতি তারকা হওয়ার দৌড়ে অংশ নেওয়ার আগ্রহ কখনও তাঁর ছিল না। তাই যখনই সময়-সুযোগ মিলেছে, চেষ্টা করে গেছেন ভিন্ন কিছু করার। সেই ভাবনা থেকেই সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন দুটি নতুন গান। তাঁর একক ‘মন মানে না’ ও বেলাল খানের সঙ্গে ‘মন আমার তোমার কথা কয়’।
গান দুটি অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এর আগেও তাঁর গাওয়া ‘জলছায়া’, ‘নিঃশ্বাস’, ‘মুগ্ধতা’, ‘দেশি গার্ল’, ‘শিশির ভেজ নদী’, ‘হারানো যাবে না’, ‘আসবে না ফিরে’, ‘কথা দিলাম’, ‘দেবো মায়া’সহ বেশ কিছু গান শ্রোতার মধ্যে সাড়া ফেলেছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘পোড়ামন ২’ ছবিতে গাওয়া ‘সুতো কাটা ঘুড়ি’ গানটি। কিন্তু অবাক হতে হয় এমন একটি গানে কণ্ঠ দেওয়ার পরও প্লেব্যাকে নিয়মিত হলেন না।
কারণ জানতে চাইলে নদী বলেন, “প্লেব্যাক করব না, এমন কথা আজও বলিনি। গানের কথা-সুর ভালো হলেও যেটাই হোক নির্দ্বিধায় গাইব। এই যেমন ক’দিন আগেও শিল্পী শাহরিয়ার রাফাতের সঙ্গে প্লেব্যাক করেছি ‘রক্তক্ষরণ’ ছবিতে। আগামীতেও গাওয়ার ইচ্ছা আছে। তবে পথটা তখনই মসৃণ হবে যখন সিনেমার সংগীত পরিচালকরা আমার গায়কি নিয়ে আলাদা করে ভাববেন।”
নদীর এ কথা স্পষ্ট, যে কোনো মাধ্যমে গাইতে তিনি প্রস্তুত। তাঁর বড় কারণ ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য তিনি ভেঙে নানাভাবে উপস্থাপনের চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। মাত্র তিন বছর বয়সে সংগীতে হাতেখড়ি। ছয় বছর বয়স থেকে তালিম নেওয়া শুরু করেছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতে। পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীতের চর্চাও ধরে রেখেছেন। এরপরও আধুনিক গানে শিল্পী হয়ে ওঠার প্রেরণা পেয়েছেন শুধু শ্রোতাদের জন্য। কেননা, ২০১০ সালে তিনি যখন চ্যানেল আই সেরা কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছে গেছেন, তখন থেকেই তাঁর কাছে শ্রোতারা নতুন কিছুর প্রত্যাশা শুরু করে দিয়েছিলেন।
যদিও বেশ কিছু ভালো গানের মাধ্যমে নদী সেই প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করেছেন। তিনি বরাবরই সংখ্যার চেয়ে সংগীতের মানকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি জানেন শ্রোতার মনে স্থায়ী আসন করে নেওয়ার জন্য সংখ্যা নয়, ভালো গানই বড় সম্পদ। সেই সম্পদ অর্জন করা তাঁর শিল্পী জীবনের প্রধান লক্ষ্য। সে কারণেই দু’একটি করে ভিন্ন স্বাদের গান তৈরি করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। শুধু গান গাওয়া নয়, গীতিকথা লেখা, তাতে সুর বসানো নিয়েও ব্যস্ত সময় কাটছে তাঁর। যাতে করে আগামী দিনে শ্রোতারা নতুন এক নদীকে আবিষ্কার করতে পারেন।
এখানেই শেষ নয়, নন্দিত সব শিল্পীর কিছু কালজয়ী গানও নতুন করে কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন দশকে আলোড়ন তোলা সেসব গানগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লক্ষ্যে তাঁর এ উদ্যোগ। শিগগিরই সেই গানগুলো তাঁর নিজস্ব চ্যানেলে একে একে প্রকাশ পাবে। এ সুখবরটা জানালেন নদী নিজেই।