স্পোর্টস ডেস্ক:
‘ভিক্টোরি ল্যাপ’ নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করছিল ফরচুন বরিশাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ড্রেসিংরুম পেরোনোর সময় ভেতরে যত দূর দৃষ্টি গেল, স্বাভাবিকভাব কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং কয়েকজন ক্রিকেটারের মুখ অন্ধকারে ঢাকা। যেকোনো টুর্নামেন্টের শেষ দিনটি তো এমনই! একদিকে আনন্দ আরেক দিকে বিষাদের ছায়া।
বিপিএলের ফাইনাল মানেই দলটি কখনো মন খারাপ করে বাড়ি ফেরেনি। তাদের জন্য ব্যাপারটা তাই নতুন। বরিশালও তো নতুন এক স্বাদের সঙ্গে পরিচিত হলো। ভিন্ন নামে এর আগে সব মিলিয়ে তিনবার ফাইনাল খেলেছে বরিশাল।
সর্বশেষটি খুব বেশি দূরের নয়। মাঝখানে নবম আসর বাদ দিয়ে তার আগেরটিতে এই কুমিল্লার কাছে হেরেই স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল বরিশালের। ফরচুন বরিশাল নামে সেবারই প্রথম ফাইনালে উঠেছিল দলটি।
‘বরিশাল বরিশাল’ কলরব যেন তাই আরো বেশি ছুঁয়ে গেল তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমদের। বরিশালের শিরোপা জয় আরো একদিক থেকে বিশেষ। সেটা মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য। বিপিএলের শুরুর আসর থেকে খেলছেন দেশের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার। কয়েকবার ফাইনাল খেললেও ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়নি তাঁদের।
দুজনের সেই আক্ষেপ একসঙ্গেই ঘুচল। দুজনের আবেগের মুহূর্ত আরো রঙিন করেছেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম। নিজের দ্বিতীয় বিপিএল শিরোপা বিশেষভাবে এই দুজনের সঙ্গে উৎসর্গ করেছেন আরো কয়েকজনকে, ‘যেকোনো শিরোপা জেতা দারুণ ব্যাপার। তবে এবার একটু ভিন্ন কারণ ছিল। কারণ আমাদের দলে এমন কয়েকজন ছিল তরুণদের মধ্যে মিরাজ, সৌম্য বা অভিজ্ঞদের মধ্যে রিয়াদ ভাই, মুশফিক, ওরা লম্বা সময় ধরে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে। কিন্তু ওরা এই (বিপিএল) ট্রফি কখনো পায়নি। তাই আমার নিজেরই একটা ইচ্ছা ছিল আল্লাহ যদি আমাদের দেয়, তাহলে আমি তাদের উৎসর্গ করব।’
সে ফিল্ডিং পরিবর্তন করেছে, আরো অনেকভাবে সাহায্য করেছে। এটাকে আমি মুশির ট্রফি বলব।’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় তামিম ডেকে নেন মাহমুদ ও মুশফিককে। মুহূর্তটা ছুঁয়ে গেছে মাহমুদকে, ‘অসম্ভব সুন্দর অনুভূতি। তামিমকে এখানে ডেকে আনার জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই। আমি আমার সেরা ক্রিকেটটা খেলার চেষ্টা করেছি।’
মুশফিক বলছিলেন, ‘এটা আমার তৃতীয় ফাইনাল, প্রথমবার জিতেছি। তামিমকে ধন্যবাদ দিতে চাই, সে দারুণ নেতৃত্ব দিয়েছে।’ অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেল বরিশালকে টুর্নামেন্ট যত এগিয়েছে তত অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। নানা ঘটনাপ্রবাহের পর বিপিএল দিয়ে ফিরে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন তামিম নিজে। নিজের ফেরা আর দলের ভালো করার রহস্য নিয়ে তামিম বলছিলেন, ‘যদি এভাবে ভাবতাম যে জবাব দিতে হবে, তাহলে হয়তো ভালো করতে পারতাম না। আমি জিনিসটাই ভাবি নাই যে জবাব দিতে হবে। আমার ক্যারিয়ার যদি তিন বছরের হতো, তাহলে হয়তো বা চিন্তা করতাম জবাব দিতে হবে। আমি কী করেছি না করেছি, সবাই দেখেছে। আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল একটি ভালো পরিবেশ তৈরি করা। আমাদের দলের পরিবেশ ছিল অবিশ্বাস্য। আমরা ভাগ্যবান যে বিদেশিরা ভালো খেলোয়াড় তো বটেই, তারা ভালো মানুষ ছিল। আমরা প্লে-অফে আসতে পারব কি না তা নিয়ে নিজেরাও শঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু দলের পরিবেশের কারণে এটা করতে পেরেছি।’