Tuesday , December 3 2024

বেইলি রোডে আগুন: কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বেড়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগেরই ‘এক্সটার্নাল বার্ন’ কম ছিল। এ অবস্থায় কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়ায় আহত ও মৃতদের ‘ইন্টার্নাল বার্ন’ হয়েছে বলে ধারণা করছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ।

আজ শুক্রবার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের শারীরিক অবস্থা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে একজন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি। বাকিরা পোস্ট অপারেটিভ সেন্টারে রয়েছে। তাদের এক্সটার্নাল বার্ন মারাত্মক নয়। তবে সকলের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে এবং ইন্টার্নাল বার্ন হয়েছে। এই মুহূর্তে সবার অক্সিজেন সেচুরেশন ভালো রয়েছে। তবে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পার না হলে বোঝা যাবে না। তারা প্রত্যেকে কার্বন মনোক্সাইড ইনফেল করেছেন। এটি মারাত্মক বিষাক্ত। এটি ইন্টার্নাল অর্গানগুলোকে নষ্ট করে দেয়। অক্সিজেন গ্রহণে বাধা প্রদান করে। ফলে যতক্ষণ না এই গ্যাস বের হচ্ছে রোগীরা শঙ্কামুক্ত নন।’

তিনি আরও বলেন, ‘তরুণদের শরীর থেকে এটি দ্রুত ক্লেয়ার হয়। তবে কারো যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ থাকে তাহলে তিনি সহজে কার্বন মনোক্সাইড মুক্ত হতে পারেন না। এর সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য যদি অর্গান ফেইলিউর ঘটে। তবে তার মেডিকেল প্রবলেম ডেভেলপ ঘটবে। তখন তাদের আমরা মেডিসিন বিভাগে রেফার করব। আমরা সর্বোচ্চ ভালোটা আশা করছি।’

কার্বন মনোক্সাইডের সম্ভাব্য উৎসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করা হয় তাতে হাইড্রো কার্বন থাকে। এছাড়া মিথেন গ্যাস পুড়ে কার্বন মনোক্সাইড ও ডাই অক্সাইড তৈরি হয়। হাইড্রো কার্বন থেকে ডাই ও মনোঅক্সাইড তৈরি হয়। এটি মারাত্মক বিষাক্ত, এমনকি তৎক্ষণাৎ মৃত্যুও হতে পারে। আমরা ধারণা করছি, কার্বন মনোক্সাইডের কারণেই এত অধিক মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মৃত ও আমাদের এখানে ভর্তিদের অবস্থা দেখে এমন মনে হয়েছে। আমাদের এখানে সবাই অল্প বার্ন নিয়ে ভর্তি।’ এছাড়া বাকিরা যারা ছাড়া পেয়েছে তাদের হাতে বা অন্যান্য বহিঃঅঙ্গে সামান্য বার্ন ছিল বলেও জানান তিনি।

বোর্ড গঠন বিষয়ে ডা. তানভীর বলেন, ‘রাতেই আমাদের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ডের সবাই রোগীদের দেখে গেছেন। আমাদের সকল সেটআপ রয়েছে। প্রতিদিন আমরা গড়ে ১২০ জন রোগী ডিল করে থাকি।’

বার্নের অনেকগুলো ক্রাইটেরিয়া রয়েছে জানিয়ে এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘আমরা পানি ও আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে অভ্যস্ত ছিলাম। এখন আমাদের দেশে বৈদ্যুতিক বার্ন ও এই ধরনের বিষক্রিয়ার বার্ন বাড়ছে। এ ধরনের বার্ন শতাংশ দিয়ে বিবেচনা করলে হবে না। এক সময় এসিড বার্ন ছিল। অল্প এসিড ছুড়ে মারতো, কিন্তু বিকৃতি হতো ভয়ানক পর্যায়ের। তেমনই বৈদ্যুতিক বার্নে বাইরে অল্প পোড়ে, অথচ হার্ট, কিডনি ও লিভার পুড়ে যায়।’

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত অবস্থায় ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে বার্ন ইউনিটে ১০ জন ভর্তি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ২ জন ভর্তি আছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে বেইলি রোডে ছয়তলা ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

About somoyer kagoj

Check Also

ভারতের উচিত তার দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: তথ্য উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিনিধি:রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও ইসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *