নিজস্ব প্রতিবেদক:
সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে দুই আইনজীবীর পেশা পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেন। তার আগে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদালত অবমাননার বিষয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে এ দুই আইনজীবীর পক্ষে আবেদন করা হয়। এ দুই আইনজীবী হলেন- মোহাম্মদ মহসিন রশিদ ও শাহ আহমেদ বাদল।
আদালতে তাঁদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছি। বেঞ্চে একজন বিচারপতি না থাকায় এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।
তবে আমাদের পেশা পরিচালনার ক্ষেত্রে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটি তুলে নিয়েছেন আপিল বিভাগ। আগামী ১৮ মার্চ পরবর্তী আদেশের তারিখ রেখে ওইদিন আদালতে আমাদের থাকতে বলা হয়েছে।’ আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদল বলেন, ‘ভবিষ্যতে আদালত অবমাননার বিষয়ে সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেছি।’
বিএনপির সরকার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত বছর ২৭ ডিসেম্বর আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সংবাদ সম্মেলন করে ১ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি এ কর্মসূচি ঘোষণা করে সংগঠনটি। সেদিন ওই সংবাদ সম্মেলনে কথিত ‘সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এডহক কমিটি’র আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহসিন রশিদ ও সদস্য সচিব শাহ আহমেদ বাদল উপস্থিত থেকে কর্মসূচিতে সংহতি জানান। পরে গত ১ জানুয়ারি তাাঁরা আদালত বর্জন কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে প্রধান বিচারপতির দপ্তরে চিঠি দেন। পরদিন এ চিঠি প্রধান বিচারপতির দপ্তরে উপস্থাপন করা হয়। তার পরদিন অর্থাৎ গত ৩ জানুয়ারি স্বপ্রণোদিত আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
দুই আইনজীবীকে তলবের আদেশে বলা হয়, চিঠিতে কিছু অবমাননাকর বিবৃতি (শব্দ ও বাক্য চয়ন) রয়েছে যা প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রবিরোধী এবং সামগ্রিকভাবে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি, অবস্থান এবং মর্যাদার প্রতি অবমাননাকর বলে মনে হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আমরা মনে করি যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উভয় সদস্য- মোহাম্মদ মশিন রশীদ এবং শাহ আহমেদ বাদল নামে বিজ্ঞ আইনজীবীকে তাদের এই আচরণ ব্যাখ্যা করার জন্য এই আদালতে হাজির হতে বলা উচিত। সেই সঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে কেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
পরে গত ১১ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে দুই আইনজীবী আদালত অবমাননার ব্যাখ্যা দিতে সময় চান। আদালত তাঁদের চার সপ্তাহ সময় দিয়ে বলেন, এই চার সপ্তাহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল কিংবা হাইকোর্ট বিভাগে দুই আইনজীবী তাঁদের পেশা পরিচালনা করতে পারবেন না। সে ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালত অবমাননার বিষয়ে দুই আইনজীবী তাঁদের ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু তাঁদের ব্যাখ্যায় আদালত সন্তুষ্ট না হলে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে দুই আইনজীবীর পক্ষে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। এরপর আদালত পেশা পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা বহাল চলমান রেখে। ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ রেখেছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করেন এ দুই আইনজীবী।