আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আলেক্সি নাভালনির মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে এই নেতার মৃতদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন নাভালনির মুখপাত্র কিরা ইয়ারমিশ।
বিবিসিকে ইয়ারমিশ বলেন, তাদের বিশ্বাস রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনই নাভালনিকে মেরে ফেলতে বলেছেন।
“আমরা নিশ্চিতভাবেই জানি এটা কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। তারা এখন হত্যার প্রমাণ লোপাট করতে চাইছে। যে কারণে তারা পরিবারের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করছে না এবং এই কারণে তারা পরিবারের কাছ থেকে মৃতদেহ লুকিয়ে রেখেছে।
“অথচ, রাশিয়ার আইনানুযায়ী কোনো কারাবন্দি মারা গেলে দুই দিনের মধ্যে তার মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করতে হয়।”
রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের কট্টর সমালোচক নাভালনি কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা গেছেন বলে শুক্রবার রাতে খবর প্রকাশ করে দেশটির কারা কর্তৃপক্ষ।
উগ্রপন্থায় উস্কানি, অর্থায়ন এবং একটি উগ্রপন্থি সংগঠন প্রতিষ্ঠার অভিযোগে গতবছর অগাস্টে নাভালনিকে নতুন করে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেই সাজাই খাটছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই ব্যাপকভাবে মনে করা হয়ে থাকে।
গতবছরের শেষ দিকে রাশিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ইয়ামালো-নেনেতের আর্কটিক পেনাল কলোনিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নাভালনিকে। এই কারাগারকে রাশিয়ার সবচেয়ে কঠোর জেলগুলোর একটি বলেই গণ্য করা হয়।
নাভালনির মৃত্যুর খবর নিয়ে শুরু থেকেই ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। কারা কর্তৃপক্ষ এ নেতার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানায়নি। শুধু জানায়, শুক্রবার তিনি হাঁটতে বের হয়েছিলেন। হাঁটা শেষে ফিরেই অসুস্থ বোধ করেন এবং অজ্ঞান হয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকদের ডাকা হয় এবং বহু চেষ্টার পরও নাভালনির জ্ঞান আর ফেরেনি। পরে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বক্তব্যে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া তার স্বামীর মৃত্যুর খবর নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন, “আমরা পুতিন এবং তার সরকারকে বিশ্বাস করতে পারি না। তারা সবসময় মিথ্যা বলে।”
পরে শনিবার নাভালনির দল থেকে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়। বলা হয়, নাভালনির মা লুডমিলার কাছে কারাগার থেকে যে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে সেখানে লেখা আছে, ১৬ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার স্থানীয় সময় ১৪:১৭ মিনিটে নাভালনির মৃত্যু হয়।
আরো বলা হয়, পরীক্ষার জন্য নাভালনির মৃতদেহ তাকে যে কারাগারে রাখা হয়েছে সেখান থেকে কাছের শহর সালেখার্ডের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নাভলনির মা এবং তার আইনজীবী মৃতদেহ গ্রহণ করতে সালেখার্ডের মর্গে যান। কিন্তু সেটি বন্ধ ছিল।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স এ এক পোস্টে ইয়ারমিশ লেখেন, তাদের দুইজনকেই ‘নিশ্চয়তা’ দিয়ে বলা হয়েছিল নাভালনির মৃতদেহ সেখানেই আছে।
“নাভালনির আইনজীবী মর্গের দরজায় থাকা থাকা ফোন নম্বরে কল করলে তাকে বলা হয়, আজ তিনিসহ সাত জন ফোন করেছেন। নাভালনির মৃতদেহ সেখানে নেই।”