আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক আদালত এই রায় মানতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে না পারলেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি গুরুত্ব বহন করে। ফিলিস্তিনের গাজায় প্রাণহানি ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ইসরায়েলকে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশনা দিতে পারে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) বা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত।
গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে- দক্ষিণ আফ্রিকার এমন অভিযোগের ওপর শুনানির পর শুক্রবার আইসিজে এই সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
দুই সপ্তাহ আগে ওই মামলা দায়েরের পর হেগের এই আদালত দুই দেশেরই বক্তব্য শুনেছে, যেখানে ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আইসিজে এই রায় মানতে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে না পারলেও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি গুরুত্ব বহন করে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রকারী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে আকস্মিকভাবে ঢুকে হামলা চালিয়ে ১২০০ মানুষকে হত্যা এবং অন্তত ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল, যা এখনো চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের হামলায় এ পর্যন্ত ২৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছে কয়েক হাজার।
গাজায় গণহত্যার অভিযোগ আমলে নিয়ে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধসহ নয়টি ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক এই আদালতে আবেদন করেছিল ফিলিস্তিনের দৃঢ় সমর্থক দক্ষিণ আফ্রিকা।
আইসিজের যে ১৭ জন বিচারকের প্যানেল শুক্রবার রায় দেবে, তাদের মধ্যে ১৫ জন স্থায়ী বিচারক। এর বাইরে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলের একজন করে বিচারক রয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবারের রায়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত মামলার প্রধান যে অভিযোগ, গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে না, বরং দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন অনুযায়ী জরুরি ভিত্তিতে সামরিক অভিযান স্থগিতের নির্দেশনা দিতে পারে।
দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিজেকে যে সব ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছে তার মধ্যে অবিলম্বে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধ করা অন্যতম।
ইসরায়েলের অভিযান ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করে, এমন সম্ভাব্য ঝুঁকি আছে কি না এবং সামরিক অভিযান স্থগিতের এই অস্থায়ী নির্দেশ জারি করা হবে কি না, ১৭ জন বিচারকের প্যানেল শুধু এই সিদ্ধান্তই নেবে। শুক্রবার প্রায় ঘণ্টাখানেক শুনানির পর আদালত হেগের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় (১২০০ জিএমটি) এ রায় দেবে।
আইসিজের কাছে নয়টি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান স্থগিত করা, আরও মানবিক ত্রাণ সহায়তার অনুমোদন এবং সম্ভাব্য লঙ্ঘনের বিষয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচার এর মধ্যে অন্যতম। এই সবগুলো আবেদন পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।
গণহত্যা চালানোর অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইসরায়েল বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা সত্য বিকৃত করছে। ইহুদী রাষ্ট্রটির দাবি, আত্মরক্ষার অধিকার তার রয়েছে এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা নয়, তাদের লক্ষ্য শুধু হামাসের যোদ্ধারা।
দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদনটি `অতি বিকৃত‘ এবং এতে ‘অস্তিত্বহীন গণহত্যার ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা হয়েছে’, এমন যুক্তি তুলে ধরে তা বাতিলের জন্য আদালতে বিচারকদের কাছে আবেদন করেছিল ইসরায়েল।