খুলনা প্রতিনিধি
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের একাধিক প্রার্থীর কারণে খুলনার ৯ উপজেলার সাতটিতেই বিভক্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ভোটের পরও বিভক্তি নিরসনে জেলা আওয়ামী লীগ উদ্যোগ না নেওয়ায় সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলাগুলো নিয়ে গঠিত তিনটি আসনেই বিজয়ী নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা আওয়ামী লীগেরই পরাজিত প্রার্থীর কর্মীদের কোণঠাসার চেষ্টা করছে। ভঙ্গুর সাংগঠনিক অবস্থায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও প্রভাব পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। এই আসনে কেটলি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত মোস্তফা রশিদী সুজার ভাই এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা।
নির্বাচনের সময় রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন বাদশা, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুল, জেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মারুফ, তেরখাদা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা প্রকাশ্যে কেটলি প্রতীকের পক্ষে কাজ করেন। এ ছাড়া দারার ভাইপো জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদীন রশিদী সুকর্ণ, বেয়াই জেলা যুবলীগ সভাপতি চৌধুরী রায়হান ফরিদ, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি পারভেজ হাওলাদারসহ অনেক নেতাই ছিলেন এই দলে।
ভোটের পর নিজের নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে মোর্ত্তজা রশিদী দারা বলেন, ভোটের পর থেকে এ পর্যন্ত তাঁর ৩০-৩৫ অনুসারী বিজয়ী প্রার্থীর লোকজনের মারধরের শিকার হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিষয়টি জানালেও তারা এদের পাশে দাঁড়ায়নি। এমনকি তিনি নিজেও ৭ জানুয়ারি ভোটের পর এলাকায় যেতে পারেননি।
অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুস সালাম এমপি বলেন, আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী নির্বাচনের সময় প্রকাশ্যেই নৌকার বিরোধিতা করেছে। নেতাদের উচিত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া, না হলে দলে শৃঙ্খলা থাকবে না। এর প্রভাব পরবর্তী নির্বাচনগুলোতেও পড়বে।
খুলনা-৫ (ফুলতলা ও ডুমুরিয়া) আসনে জয় পেয়েছেন নৌকার প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এখানে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। ভোটে আকরাম হোসেনের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী আশরাফ হোসেন আশু, যুগ্ম সম্পাদক আবু তাহের রিপন, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ সাদ্দাম হোসেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার, ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা কামাল খোকন ও এ বি এম শফিকুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আলমগীর হোসেন, উপজেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি শফিকুল ইসলাম লিটুসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী।
আকরাম হোসেনের অভিযোগ, ৭ জানুয়ারি ভোটের পর থেকে তাঁর অনুসারীদের ওপর নিয়মিত হামলা হচ্ছে। অবশ্য সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনেও একই অবস্থা। এখানে নৌকার প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামানের কাছে পরাজিত হয়েছেন ঈগল প্রতীকে নির্বাচন করা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহবুবুল আলম।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারী জানান, বিভক্তির কারণে দলের ওপর প্রভাব পড়ছে। সংকট নিরসনে উদ্যোগ দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।