আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কুকুরের মাংস বিক্রি ও খাওয়া নিয়ে নানা সময়ে বিতর্কের মুখে পড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০২৭ সাল থেকে আর কুকুরের মাংস বিক্রি হবে না।
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে মঙ্গলবার নতুন একটি আইন পাস হয়েছে। যেখানে কুকুর জবাই এবং মাংসের জন্য কুকুর বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে এখনই এই আইন কার্যকর হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিবিসি। আগামী ২০২৭ থেকে নতুন এই আইনটি কার্যকর হবে। যার মধ্য দিয়ে দেশটির বহু প্রাচীন একটি খাদ্যাভাসের অবসান হতে চলেছে।
কুকুরের মাংসের স্টু যেটির স্থানীয় নাম ‘বোশিনটাং’, দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষদের কাছে একটি দারুণ সুস্বাদু খাবার। যদিও এখন শুধু বয়স্কদের কাছেই এটি জনপ্রিয়। তরুণরা কুকুরের মাংস এখন আর খেতে চান না। যদিও নতুন আইনে কুকুরের মাংস খাওয়া অবৈধ নয়।
কুকুরের মাংস খাওয়া নিয়ে গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি জরিপ পরিচালিত হয়। সেখানে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন তারা গত এক বছরে অন্তত একবার কুকুরের মাংস খেয়েছেন। ২০১৫ সালে যেটা ছিল ২৭ শতাংশ। ওই জরিপে ৫ শতাংশের কম মানুষ বলেছেন, তারা কুকুরের মাংস খাওয়া সমর্থন করেন।
বরং দেশটির তরুণ প্রজন্ম কুকুরের মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে। এমনই একজন ২২ বছরের তরুণ শিক্ষার্থী লি চায়ে-ইওন। বিবিসিকে তিনি বলেন, প্রাণী অধিকার রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞার দরকার ছিল।
“এখন অনেক মানুষের পোষা প্রাণী আছে। কুকুর এখন পরিবারের সদস্যদের মত। আর পরিবারের কাউকে খাওয়া নিশ্চয়ই ভালো কিছু না।”
দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল এবং তার স্ত্রীর ছয়টি পোষা কুকুর রয়েছে। এ দম্পতি কুকুরের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করার পক্ষে নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন।
নতুন আইনে অবশ্য কুকুরের মাংস খাওয়া নয় বরং কুকুরের মাংস বিক্রি বন্ধের দিকে বেশি মনযোগ দেওয়া হয়েছে। নতুন আইনে যারা কুকুর জবাই করবে তাদের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। আর যারা মাংসের জন্য কুকুর পালবে বা কুকুরের মাংস বিক্রি করবে তাদের সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজার বিধান রাখা হয়েছে।
আইন পাস হলেও এখনই তা কার্যকর না করার ব্যাখ্যা বলা হয়েছে, কুকুরের খামারি এবং রেস্তারাঁর মালিকদের নতুন কাজ এবং আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পেতে তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় ১৬শ কুকুরের মাংসের রেস্তোরাঁ এবং ১১ হাজার ১৫০টি কুকুরের খামার রয়েছে। তাদের সবাইকে এখন নিজেদের ব্যবসা বন্ধের একটি পরিকল্পনা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জমা দিতে হবে।
নতুন আইনে যারা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন সেই সব কসাই, রেস্তোরাঁর মালিক এবং খামারিদের পূর্ণ সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার।
তবে তাদের ঠিক কিসের ভিত্তিতে এবং কি পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে তা এখনো জানানো হয়নি। এটি নিয়ে একটি দিকনির্দেশনা তৈরির কাজ এখনো চলছে।