পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
মামলার বাদী মিনারা আক্তার (দুই পুলিশ সদস্যের মাঝখানে বসা)
পঞ্চগড়ে একটি হত্যা মামলার ১৬ আসামির জামিন মঞ্জুর করায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট অলরাম কার্জীকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছেন মামলার বাদী। এ ঘটনায় বাদী মিনারা আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ঘটনাটি ঘটে।
আদালত সূত্র ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ ডিসেম্বর উপজেলা সদরের সাতমেরা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই ভাইয়ের পরিবারের মারামারিতে ইয়াকুব আলী (৮৩) নামের একজনের মৃত্যু হয়। ওইদিনই রাতেই নিহতের মেয়ে মিনারা আক্তার বাদী হয়ে ছোট ভাইসহ ১৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন। সোমবার আসামিদের মধ্যে প্রধানসহ তিনজন বাদে ১৬ জন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে বাদী মিনারা আক্তার বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারেন। এসময় বিচারকের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে মিনারাকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।
এ ঘটনায় নিহতের বড় ছেলের স্ত্রী রওশনা আক্তার লিলিসহ বাদীপক্ষের স্বজনরা বলেন, ‘এমন একটি হত্যা মামলার আসামিদের কিভাবে কোন আইনে জামিন দেওয়া হয়? আমরা এর বিচার চাই। আবার উল্টো আমাদের মামলার বাদীকে পুলিশ আটক করে রেখেছে। তাকে ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আদালত থেকে যাবো না।’
জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু মো. ইউনুস আলী লেলিন, ‘বাদীর নিম্ন আদালতের রায় যদি পছন্দ না হয় তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়া সুযোগ আছে। কিন্তু বাদী বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মেরেছে। জুতাটি বিচারকের সামনে থাকা গ্লাসে লেগে নিচে পড়ে যায়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, ‘কয়েকদিন আগে বাদীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আজ তাদের বাড়িতে কুলখানি হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি হত্যা মামলায় সব আসামির জামিন দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিচারকের এমন অর্ডারে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে আদালত ত্যাগ করে চলে আসি।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী রাকিবুত তারেক বলেন, ‘আসামিদের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। আর মামলার যারা মূল আসামি তারা আত্মসমর্পণ করেননি। যারা আত্মসমর্পন করেছেন তাদের বেশিরভাগই নারী ছিলেন। এছাড়া আসামিদের বক্তব্য ছিল, ওই ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। তবে মামলার জব্দ তালিকা ও সুরতহাল রিপোর্টের নথিতে এতথ্য নেই। তাই সার্বিক বিবেচনা করে আদালত জামিন দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী বলেন, আদালতে একটু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা শুনেছি। তবে জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছুটিতে আছেন। আইনজীবী সমিতির সভাপতিও কোর্টে আসেননি। এজন্য আপাতত আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পঞ্চগড় আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন বলেন, আটক নারীর বিরুদ্ধে একই আদালতের অফিস সহায়ক তাজুল ইসলাম আদালত অবমাননার মামলা করেছেন। পরে একই আদালতে তার জামিন আবেদন করা হলে পাঁচ হাজার টাকা জামানতে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়।