মো. রাসেল সরকার (গজারিয়া) মুন্সিগঞ্জ :
৪২ পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা বিক্রি করেন মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামে দেলোয়ারা বেগম। হরেক রকম ভর্তা দিয়ে তার হাতের চিতই পিঠা খেতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটে আসে মানুষ। মাসে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার পিঠা বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়েছেন দেলোয়ারা বেগমের।
মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দড়ি বাউশিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ভেতরে নয়াকান্দি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় দেলোয়ারা বেগমের চিতই পিঠার দোকানকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০/৬০জন মানুষের জটলা। তাদের মধ্যে কয়েকজন বেঞ্চে বসার সুযোগ পেয়েছেন বাকিরা আশেপাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। পঞ্চাশঊর্ধো বয়সী এক মহিলা চিতই পিঠা বানিয়ে আগত লোকদের দিয়ে শেষ করতে পারছেন না।
পিঠা খেতে আসা কল্পনা রানী দাস বলেন, পার্শ্ববর্তী পুড়াচক বাউশিয়া গ্রাম থেকে পরিবারের লোকদের নিয়ে তিনি চিতই পিঠা খেতে এসেছেন। বিভিন্ন এলাকায় চিতই পিঠা পাওয়া গেলেও ৪২পদের ভর্তা পাওয়া যায় না। মূলত হরেক রকমের ভর্তার স্বাদ নিতেই তারা এখানে এসেছেন। দেলোয়ারা বেগমের দোকানে প্রচন্ড ভিড় থাকায় আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষায় থাকার পরও এখনো পিঠা পাননি তারা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা থেকে পিঠা খেতে আসা কলেজ ছাত্র সজিব হোসেন বলেন, গজারিয়ার এক বন্ধুর ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তারা ৪২ পদের ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খাওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। সেজন্য আজ পাঁচটি মোটরসাইকেল নিয়ে সাতজন বন্ধু মিলে তারা এখানে পিঠা খেতে এসেছেন।
পিঠা খেতে আসা কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, দেলোয়ারা বেগমের পিঠা মূলত ভর্তার জন্য ভাইরাল। গত কয়েক বছর ধরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাইপ তৈরি করেছে। প্রতিবছরই তারা এখানে পিঠা খেতে আসেন।
এ বছর তার বন্ধুর সোহেলকে নিয়ে তিনি পিঠা খেতে এসেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ ছাত্র ওমর ফারুক বলেন, সন্ধ্যা হলে প্রচুর লোকের আগমন ঘটে এখানে অবস্থা এমন হয় আমরা যারা স্থানীয় তারাই পিঠা খেতে পারি না। ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে থেকেও মানুষ পিঠা পায় না।
দেলোয়ার বেগমের স্বামী সুরুজ মিয়ার বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময় আমি রিকশা চালাই এবং কৃষিকাজ করি তবে নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত স্ত্রীকে সহযোগিতা করি। দিনের বেলা মিল থেকে চাল গুড়া করে আনি, ভর্তা বানাতে সাহায্য করি। বিকাল থেকেই দোকানে প্রচুর লোকসমাগম কম হয়। প্রতিদিন ৩৫০-৪০০জন লোক আসে পিঠা খেতে। দেলোয়ার পিঠা বানিয়ে দেয় আর আমি সেগুলো মানুষকে খেতে দেই। পিঠার বিল আদাই করি,টাকা হিসেব রাখি’।
বিষয়টি সম্পর্কে দেলোয়ারা বেগম বলেন, আগে পরিবারে অভাব অনটন ছিল এখনকার অবস্থা অনেক ভালো। গত প্রায় পাঁচ ধরে তার পিঠার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ঢাকা,গাজীপুর, নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ,কুমিল্লা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ পিঠা খেতে আসে। শুক্রবারে ভিড় থাকে বেশি। শুক্রবার প্রায় এক মন চালের পিঠা বিক্রি করতে পারেন তিনি আর সপ্তাহের অন্যান্য দিন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি চালের পিঠা বিক্রি হয়। প্রতি কেজি চালে ২০ থেকে ২৫টি পিঠা তৈরি করা যায়। প্রতিদিন ৭৫০ থেকে ১ হাজার চিতই পিঠা তৈরি করেন তিনি। প্রতিটি চিতই বিক্রি হয় ১০ টাকায় আর ডিম ও মসলা সহযোগে স্পেশাল ডিম পিঠা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। সবরকম পিঠার সাথেই ৪২পদের ভর্তা ফ্রি দেওয়া হয়। যার যতবার খুশি ভর্তা নিতে পারবে। ৪২ পদের ভর্তা বানানোর জন্য ১২/১৫ রকমের শুটকি, বিভিন্ন রকমের মাছ, কয়েক রকমের ডাল, বাদাম, ধনিয়া পাতা, মরিচ, মৌসুমী সবজি ব্যবহার করেন তিনি। প্রতিমাসে প্রায় তিন লক্ষ টাকার পিঠা বিক্রি হয়। বছরের অন্যান্য সময় তেমন কাজ থাকেনা তাই তেমন রোজগার হয়না। পিঠা বিক্রির টাকা জমিয়ে রেখে বছরের অন্যান্য সময় খরচ করেন তিনি। এতে তার সংসারের অভাব দূর হয়েছে সব মিলিয়ে ভালোই আছেন তিনি।